সত্তরোর্ধ্ব জীবনে নতুন দিগন্ত: স্বামীর থেকে ১০,০০০ মাইল দূরে নতুন জীবন, তবু ভালোবাসার বাঁধন অটুট।
জীবন যেখানে থমকে দাঁড়ায়, সেখান থেকেই তো নতুন পথের শুরু। এমনই এক গল্পের সাক্ষী মার্গারেট মারফি। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে বসবাস করা মার্গারেট, যিনি বিবাহিত জীবনের ত্রিশ বছর পার করে, জীবনের নতুন স্বাদ পেতে স্বামীর থেকে হাজার মাইল দূরে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে তিনি শুরু করেন তার নতুন জীবন।
মার্গারেটের এই নতুন পথে হাঁটার গল্প অনেকের কাছেই হয়তো অনুপ্রেরণা। ঘর সংসার, সন্তান—এসবের বাঁধন ছিন্ন করে একা এতটা পথ পাড়ি দেওয়া সহজ ছিল না। কিন্তু মার্গারেট ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিলেন।
তিনি চেয়েছিলেন নিজের জন্য কিছু করতে, জগৎটাকে নতুন করে দেখতে। তাই ৫৬ বছর বয়সে, পরিচিতিহীন এক শহরে, সম্পূর্ণ একা এসে নতুন জীবন শুরু করেন।
লন্ডনে আসার পর শুরুতে কাজ খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল মার্গারেটকে। প্রথমে কিছু দিন পরপর কাজ করতেন, আবার কখনো বা কাজ ছিলই না।
কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি থিতু হতে শুরু করেন। অবশেষে, ৬০ বছর বয়সে তিনি শিক্ষাবিদ হিসেবে একটি সম্মানজনক চাকরি পান, যেখানে তিনি সার্জনদের পেশাগত বিকাশে সহায়তা করতেন। বর্তমানে মার্গারেটের বয়স ৭১ বছর।
স্বামীর থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্তটি মার্গারেটের একার ছিল না। তাদের দাম্পত্য জীবনেও এর প্রভাব পড়েছে। মার্গারেট বলেন, “যখন সংসারের সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়, তখন বয়স্ক দম্পতিদের জন্য এটি বিবাহিত জীবনকে আরও আধুনিক ও মুক্তভাবে উপভোগ করার একটি উপায়।”
মার্গারেট এবং তার স্বামী পিটার এখনো বিবাহিত জীবন উপভোগ করছেন, যদিও তারা আলাদা দুটি মহাদেশে থাকেন। পিটার মাঝে মাঝে লন্ডন যান, আবার মার্গারেটও অস্ট্রেলিয়ায় স্বামীর কাছে যান।
তারা নিউ ইয়র্ক বা নয়াদিল্লির মতো কোনো তৃতীয় স্থানে মিলিত হয়ে একসঙ্গে ছুটি কাটান।
মার্গারেটের লন্ডনের ফ্ল্যাটটি কুইন্সল্যান্ডের বিশাল বাড়ির থেকে একেবারে ভিন্ন। কিন্তু কাজ শেষে যখন তিনি নিজের ফ্ল্যাটে বিশ্রাম নেন, তখন এক গভীর আত্মতৃপ্তি অনুভব করেন।
মার্গারেটের ভাষায়, “আমি অনুভব করেছিলাম, এবার আমার পালা।”
ছোটবেলায় মার্গারেট তার অসুস্থ ভাইবোনদের দেখাশোনার জন্য মা’কে সাহায্য করতেন। সম্ভবত সেই সময় থেকেই তিনি নিজের জীবনকে নতুনভাবে সাজাতে চেয়েছিলেন।
২৫ বছর বয়সে তিনি পিটারকে খুঁজে পান এবং পরের বছরই তাদের বিয়ে হয়।
সন্তানদের বড় করার সময় মার্গারেট মাঝে মাঝে ইংরেজি পড়াতেন। সন্তানদের নিয়ে তিনি অনেক আনন্দ উপভোগ করেছেন। এরপর তিনি আবার পড়াশোনা শুরু করেন এবং স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
মার্গারেট জানেন, তিনি ব্রিসবেনে তার বাড়িতে ফিরবেন, তবে কবে ফিরবেন, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। অনেকে তার এই সিদ্ধান্তকে স্বার্থপর মনে করতে পারেন।
মার্গারেট বলেন, “আমি অনুভব করি, একজন স্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব এবং নিজের ভালো লাগার মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব রয়েছে।”
তবে তিনি এও মনে করেন, তিনি যা করেছেন, তা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। তিনি এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শিখেছেন।
মার্গারেট আরও যোগ করেন, “আমি একা বাঁচতে শিখেছি এবং অন্যদের প্রতি আরও সহনশীল হয়েছি।”
মার্গারেট ও পিটার দুজনেই এখন তাদের এই ভিন্ন জীবনধারাকে সম্মান করেন এবং একে অপরের পছন্দকে সমর্থন করেন। তাদের দুজনের জীবনই যেন এই সিদ্ধান্তের পর আরও প্রসারিত হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান