মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য শুল্কের মোকাবিলায় চীনের প্রস্তুতি, অর্থনীতির স্থিতিশীলতার আশ্বাস।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য বাণিজ্য শুল্কের প্রভাবকে হালকা করে দেখিয়ে, চীন সরকার তাদের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে এবং কর্মসংস্থান সুরক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, তারা রপ্তানির ওপর উচ্চ শুল্কের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি সীমিত করতে সক্ষম।
খবরটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন সরকারি মন্ত্রকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে, কোম্পানি ও বেকারদের জন্য সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান এবং অন্যান্য নীতি গ্রহণ করা।
বিশ্লেষকদের মতে, গত সপ্তাহে চীনের প্রভাবশালী পলিটব্যুরোর (Politburo) বৈঠকেও রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে কীভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে চীনের ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশন (National Development and Reform Commission – NDRC)-এর উপ-পরিচালক ঝাও চেনক্সিন বলেন, “কিছু দেশ কূটকৌশল অবলম্বন করে এবং তাদের কথার খেলাপ করে। এর ফলে সবাই বুঝতে পারছে যে তথাকথিত ‘পাল্টাপাল্টি শুল্ক’ ঐতিহাসিক প্রবণতা ও অর্থনৈতিক আইনের পরিপন্থী। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়মকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং দেশগুলোর বৈধ অধিকার ও স্বার্থের ওপর গুরুতর আঘাত হানে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও মার্কিন পণ্য আমদানিতে ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (International Monetary Fund – IMF) সহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংস্থা ইতিমধ্যেই চলতি বছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে প্রায় ৪ শতাংশ করেছে।
তবে, চীনের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা মনে করেন তাদের অর্থনীতি প্রায় ৫ শতাংশ হারে বাড়তে সক্ষম হবে, যা গত বছরের প্রবৃদ্ধির সমান।
দেশটির মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক উপমন্ত্রী ইউ জিয়াদং সাংবাদিকদের বলেন, “কর্মসংস্থান রক্ষার জন্য সরকারের নীতি যথেষ্ট।
তিনি আরও জানান, সরকার কোম্পানিগুলোকে শ্রমিকদের ধরে রাখতে সহায়তা করবে এবং বেকারদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উৎসাহিত করবে।
এনডিআরসি-র উপ-পরিচালক ঝাও চেনক্সিন আরও বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ হলেও চীনের জ্বালানি সরবরাহে কোনো প্রভাব পড়বে না।
চীন ধীরে ধীরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শস্য ও অন্যান্য কৃষি পণ্যের আমদানি কমাচ্ছে। ঝাও জানান, এই ধরনের আমদানি বন্ধ হলেও খাদ্য সরবরাহে কোনো সমস্যা হবে না, কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে।
চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জু লান জানিয়েছেন, ঋণ প্রদানের সুবিধার্থে প্রয়োজনে সুদের হার কমানো হবে এবং রিজার্ভের প্রয়োজনীয়তা শিথিল করা হবে।
তিনি আরও বলেন, “কর্মসংস্থান, ব্যবসা, বাজার এবং প্রত্যাশা স্থিতিশীল রাখতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এছাড়াও, পুরাতন যানবাহন, যন্ত্রপাতি এবং কারখানার সরঞ্জাম পরিবর্তন করে নতুন করে ব্যবহারের জন্য ভর্তুকি দেওয়ার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানো হবে।
ঝাও উল্লেখ করেন, এই পদক্ষেপের ফলে সরঞ্জাম আপগ্রেডের চাহিদা বছরে ৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ানের (প্রায় ৩৪.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বেশি হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদে, চীন শহরগুলোতে আরও বেশি মানুষকে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা করছে। ঝাও বলেন, “শহরায়নের হার ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে বিনিয়োগের চাহিদা কয়েক ট্রিলিয়ন বাড়তে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।
বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি করবে। আবার, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে, বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে পরিবর্তন আসতে পারে, যা বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস