সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ: তেলের দাম কমলে কি ধাক্কা লাগবে ভিশন ২০৩০-এ?
বিশ্ব অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হলো জ্বালানি তেল। বিশ্ববাজারে তেলের দামের ওঠা-নামা অনেক দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে।
সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে কিছুটা অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ওপেক প্লাস (OPEC+) দেশগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে দায়ী করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতিতে এর প্রভাব কেমন হবে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেলের দাম কমে গেলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বে তেল নির্ভর দেশগুলো। এর মধ্যে সৌদি আরবের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। কারণ, দেশটি বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশ এবং তাদের রাজস্বের একটি বড় অংশ আসে এই তেল বিক্রি থেকে।
যদি তেলের দাম কমতে থাকে, তবে তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা, বিশেষ করে “ভিশন ২০৩০” -এর মতো বৃহৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সমস্যা হতে পারে।
সৌদি আরবের “ভিশন ২০৩০” হলো দেশটির ভবিষ্যৎ অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা। এর মূল লক্ষ্য হলো, তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং একটি আধুনিক, বৈচিত্র্যপূর্ণ অর্থনীতি গড়ে তোলা।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা বিভিন্ন মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো “নিওম” শহর। এটি একটি অত্যাধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যেখানে প্রযুক্তি, পর্যটন, এবং বিনোদন সহ বিভিন্ন খাতের সমন্বয় থাকবে। এছাড়া লোহিত সাগর উপকূলের বিলাসবহুল পর্যটন কেন্দ্র এবং “কিদ্দিয়া” বিনোদন পার্কের মতো প্রকল্পও রয়েছে।
তবে, তেলের দাম কমতে থাকলে এসব প্রকল্পের অর্থায়নে সমস্যা হতে পারে। বর্তমানে, সৌদি সরকারকে বাজেট ব্যালেন্স করতে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১০০ ডলারের বেশি প্রয়োজন। বিশ্লেষকদের মতে, তেলের দাম যদি ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলারে নেমে আসে, তবে তাদের বাজেট ঘাটতি হতে পারে ৬২ বিলিয়ন ডলার, যা তাদের বার্ষিক বাজেটের দ্বিগুণেরও বেশি।
আন্তর্জাতিক বাজারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েক বছরে তেলের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার সম্ভাবনা কম। গোল্ডম্যান স্যাকস-এর মতে, ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত ব্রেন্ট ক্রুড-এর গড় দাম হতে পারে ব্যারেল প্রতি ৬৩ ডলার এবং ২০২৫ ও ২০২৬ সালে তা আরও কমতে পারে।
ফলে, সৌদি আরবের “ভিশন ২০৩০” বাস্তবায়নে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যদিও তেলের দাম কমার ফলে সৌদি আরব কিছুটা চাপে পড়তে পারে, তবে তাদের অর্থনীতি এখনো বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তাদের বিশাল রিজার্ভ এবং কম উৎপাদন খরচ, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তেলের উৎপাদন খরচ অনেক কম হওয়ায় তারা অন্যদের তুলনায় কম দামে টিকে থাকতে পারবে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হলো, তেলের দামের এই পরিবর্তন কি আমাদের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে? মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর এর কি কোনো প্রভাব পড়বে? অথবা আমাদের জ্বালানি তেলের আমদানি খরচ বাড়বে কিনা?
এমন অনেকগুলো বিষয় রয়েছে যা গভীরভাবে পর্যালোচনা করা দরকার।
সৌদি আরব সরকার তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কতটা সফল হবে, তা এখন অনেকটাই নির্ভর করছে বিশ্ববাজারে তেলের দামের ওপর। তবে তারা যে দৃঢ়তা এবং দূরদর্শিতার সাথে কাজ করছে, তাতে অনেকেই মনে করেন, এই চ্যালেঞ্জ তারা সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন