অস্ট্রিয়ার আল্পস পর্বতমালার কোলে অবস্থিত একটি মনোমুগ্ধকর স্থান হলো বাড গ্যাস্টাইন। বহু বছর ধরেই এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, বিশেষ করে এখানকার জলপ্রপাত এবং উষ্ণ প্রস্রবণগুলি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
শুধু তাই নয়, এখানকার খনিজ সমৃদ্ধ জলে স্নান করাকে স্বাস্থ্যকর বলেও মনে করা হয়। এই কারণে বহু শতাব্দী ধরে স্থানীয় এবং বাইরের মানুষের কাছে বাড গ্যাস্টাইন এক প্রিয় গন্তব্য।
বাড গ্যাস্টাইনের আকর্ষণীয়তা শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এখানকার উষ্ণ প্রস্রবণগুলিও এর খ্যাতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। প্রতিদিন প্রায় ৫০ লক্ষ লিটার জল এই প্রস্রবণগুলি থেকে নির্গত হয়, যেগুলির তাপমাত্রা ৪৪ থেকে ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।
এই জলে রয়েছে নানান উপকারী খনিজ উপাদান। ঐতিহাসিকদের মতে, রোমান সম্রাট থেকে শুরু করে শিল্পী এবং অভিজাত শ্রেণীর মানুষেরা—সকলেই বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে এই উষ্ণ প্রস্রবণের জল ব্যবহার করতেন।
বাড গ্যাস্টাইনের স্থাপত্যশৈলীও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পাহাড়ের গায়ে নির্মিত চমৎকার সব ভিলাগুলি পুরনো দিনের আভিজাত্যের সাক্ষ্য বহন করে। একসময় পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় এই শহরের খ্যাতি কিছুটা ম্লান হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড গ্যাস্টাইনের আকর্ষণ আবার বেড়েছে, যা এখানকার হোটেল এবং স্পাগুলোর আধুনিকীকরণেও স্পষ্ট। যেমন, “হাউস হিরট” (Haus Hirt) এবং “কামোডো” (Cōmodo)-র মতো হোটেলগুলি তাদের অত্যাধুনিক পরিষেবা দিয়ে পর্যটকদের মন জয় করছে।
যারা প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য বাড গ্যাস্টাইন এক আদর্শ স্থান। এখানকার “স্টাবনারকোগেল” (Stubnerkogel) পর্বতশৃঙ্গে কেবল কারের মাধ্যমে পৌঁছে যাওয়া যায়। সেখানে একটি ঝুলন্ত সেতু এবং ভিউয়িং প্ল্যাটফর্ম থেকে “গ্রোসগ্লকনার” (Grossglockner)-এর মতো আল্পসের বিভিন্ন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
এছাড়াও, ট্রেকিং এবং হাইকিংয়ের সুযোগ তো আছেই।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এখানকার “গ্যাস্টাইনার হেইস্টোলেন” (Gasteiner Heilstollen)। একসময় সোনার খনির শ্রমিকেরা কাজ করার সময় লক্ষ্য করেছিলেন যে, এখানকার বাতাস তাদের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। আসলে, খনির গভীরে বিদ্যমান রেডন গ্যাসের কারণে এমনটা হতো।
এই রেডন গ্যাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। বর্তমানে এই খনিটিকে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয়েছে, যেখানে রেডন সমৃদ্ধ বাতাস শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা হয়।
বাড গ্যাস্টাইন শুধু একটি সুন্দর স্থানই নয়, এটি একইসাথে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনেরও একটি উদাহরণ। এখানে আসা পর্যটকেরা প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে শরীর ও মনের ক্লান্তি দূর করতে পারেন। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে, বাড গ্যাস্টাইন যে কোনও ভ্রমণকারীর জন্য একটি বিশেষ গন্তব্য হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক