ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর নির্বাচনে কামলা পারসাদ-বিসেসারের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ন্যাশনাল কংগ্রেস (ইউএনসি)-এর জয়।
ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন পিপলস ন্যাশনাল মুভমেন্ট (পিএনএম)-কে পরাজিত করে জয়লাভ করেছে ইউনাইটেড ন্যাশনাল কংগ্রেস (ইউএনসি)। দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনীতিবিদ কমলা পারসাদ-বিসেসার।
এর আগে তিনি ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই দ্বীপে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তিনিই দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
নির্বাচনে জয়ের পর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ৭৩ বছর বয়সী পারসাদ-বিসেসার তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণের অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, “এই জয় প্রবীণ নাগরিকদের তাদের পেনশন অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির জন্য, শিশুদের হাসপাতাল পুনরায় চালু করার জন্য, শিশুদের ল্যাপটপ প্রদানের জন্য এবং ৫০,০০০-এর বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য।”
উল্লেখ্য, বিশিষ্ট আইনজীবী পারসাদ-বিসেসার ২০১০ সালে ইউএনসি-র প্রথম নারী নেতা নির্বাচিত হন। দলের অভ্যন্তরে অস্থিরতা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদত্যাগ এবং বেশ কয়েকটি নির্বাচনে পরাজয়ের পরও তিনি দলের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন এবং দলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
বিশেষ করে যারা পরিবর্তনের প্রত্যাশী, তাদের কাছে তিনি একটি নির্ভরযোগ্য নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং পিএনএম দলের নেতা কেইথ রওলি বলেন, “আজকের রাত পিএনএম-এর জন্য ভালো না হলেও, ত্রিনিদাদের জন্য হয়তো ভালো হতে পারে… ফলাফল এখন আসছে। আমরা মনে করছি, নির্বাচনে আমরা হেরে গেছি।”
বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী স্টুয়ার্ট ইয়ং আরও বলেন, “আজকের নির্বাচনে জনগণ তাদের রায় দিয়েছে এবং আমরা আগামীকাল সকালের জন্য অপেক্ষা করছি। আপনারা দেখবেন, পিএনএম আবারও ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর জনগণের সেবা করার জন্য প্রস্তুত।”
এই নির্বাচনে টোবাগো পিপলস পার্টির (টিপিপি) অভূতপূর্ব সাফল্য দেখা গেছে, যারা টোবাগোতে পিএনএম-এর দুইজন সংসদ সদস্যকে পরাজিত করেছে।
২০১৩ সালে জ্যাক ওয়ার্নারের ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিবারেল পার্টি (আইএলপি) চাগুয়ানাস ওয়েস্ট আসনে জয়লাভ করার পর এই প্রথম দেশটির পার্লামেন্টে তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব সৃষ্টি হলো।
প্রসঙ্গত, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়, বাণিজ্য যুদ্ধ এবং উচ্চ অপরাধ হারের মধ্যে আকস্মিকভাবে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে, রক্তাক্ত গ্যাং যুদ্ধের কারণে দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল।
প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের এই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে গত বছর ৬২৪টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল, যা এটিকে ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের অন্যতম সহিংস দেশে পরিণত করেছে।
নির্বাচনী প্রচারের সময়, ইউএনসি অপরাধ দমনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেয়, যার মধ্যে প্রতিরক্ষা ও বিচার বিষয়ক নতুন মন্ত্রনালয় তৈরি অন্যতম।
নির্বাচনের আগে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হামিদ ঘানি জানান, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পারসাদ-বিসেসারের কারণে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পরিবর্তন হতে পারে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এবং ভেনেজুয়েলার মধ্যে অফশোর প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্পের উন্নয়নের জন্য দেওয়া দুটি লাইসেন্স বাতিল করে, যা দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল।
ঘানি আরও বলেন, “পিএনএম জয়ী হলে, [ভেনেজুয়েলার] মাদুরোর সঙ্গে ইয়ংয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ট্রাম্প প্রশাসনের নজরে আসত। তবে ইউএনসি জয়ী হলে, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে, কারণ কমলা পারসাদ-বিসেসার ট্রাম্পের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।