নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, ক্যামেরুন সীমান্ত সংলগ্ন বর্নো রাজ্যে একটি ভয়াবহ বোমা হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছে। সোমবার সংঘটিত এই ঘটনায় নারী, পুরুষ ও শিশুসহ বহু মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।

সামরিক সূত্র ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়ে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

আফ্রিকার এই অঞ্চলে ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রদেশ (আইএসডব্লিউএপি) এবং বোকো হারামের মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর দৌরাত্ম্য বহু পুরোনো। কয়েক দশক ধরে চলা এই সহিংসতার কারণে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত।

সম্প্রতি, এই অঞ্চলে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সামরিক কর্মকর্তা জানান, “বোমা হামলায় নিহতদের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ, ৪ জন নারী এবং ৬ জন শিশু রয়েছে। এছাড়া, আরও তিনজন গুরুতর আহত হয়েছে।”

বর্নো রাজ্যের পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

আন্তর্জাতিক এনজিও সেফটি অর্গানাইজেশন, যারা উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ায় বিদেশি এনজিওগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তাদের অভ্যন্তরীণ একটি স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, রান এবং গামবোরু-নগালা শহরের মধ্যে চলাচলকারী একটি গাড়িবহরে এই হামলা চালানো হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম সাদ জানান, “আমি বিস্ফোরণে নিহত ২৬ জনের জানাজায় অংশ নিয়েছিলাম। তাদের বেশিরভাগেরই শরীর এতটাই পুড়ে গিয়েছিল যে, তাদের শনাক্ত করাও কঠিন ছিল।”

রান জেনারেল হাসপাতালের মর্গের মেঝেতে সাদা প্লাস্টিকের ব্যাগে মোড়ানো নিহতদের সারি দেখা যায়, এমন একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে নিহত এক ব্যক্তির মা আব্বা আম্মা মুহাম্মদের ধারণা, এই ঘটনার পেছনে বোকো হারামের হাত রয়েছে।

গত ১৫ বছর ধরে বোকো হারামের বিদ্রোহ উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ায় গভীর সংকট তৈরি করেছে, যেখানে ৪০,০০০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

যদিও সরকার এই গোষ্ঠীগুলোকে প্রায় নির্মূল করার দাবি করেছে, কিন্তু তাদের হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

আইএসডব্লিউএপিও বর্নোর উত্তরাঞ্চলে সক্রিয় এবং তারা প্রায়ই কনভয়ে হামলা চালায় ও মহাসড়কে মাইন পুঁতে রাখে।

এই বোমা হামলার আগে, গত কয়েকদিনে উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ায় সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে।

বোকো হারাম কর্তৃক নিহত হয়েছে প্রায় ১০ জন বেসামরিক লোক, যারা ‘সিভিলিয়ান জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স’ (সিজেটিএফ)-এর সদস্য ছিল।

এছাড়া, বোকো হারাম গওজা জেলায় ১৪ জন কৃষককে হত্যা করেছে।

বর্নো রাজ্যের গভর্নর বাবাগানা উমারা জুলুম সম্প্রতি নাইজেরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে জানান, বোকো হারাম এবং আইএসডব্লিউএপি সামরিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে লেক চাদ দ্বীপপুঞ্জ, সামবিসা বন এবং ক্যামেরুন সীমান্তের মাদার পর্বতমালায় তাদের অবস্থান সুসংহত করছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা