ভিয়েতনামের শহর, হো চি মিন সিটি, খাদ্যরসিকদের জন্য যেন এক স্বর্গরাজ্য। ব্যস্ত শহরটির আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে মুখরোচক সব খাবারের দোকান, যা ভোজনরসিকদের মন জয় করে নেয় সহজেই।
আধুনিকতার ছোঁয়ার সাথে ঐতিহ্য মিশে এই শহরটিকে করে তুলেছে আরও আকর্ষণীয়। সম্প্রতি, মিশেলিন গাইড-এর তালিকায় স্থান পাওয়ার পর, শহরটি খাদ্যপ্রেমীদের কাছে আরও বেশি পরিচিতি লাভ করেছে।
আসুন, আজ আমরা ঘুরে আসি এই শহরের কিছু অসাধারণ খাদ্য অভিজ্ঞতার গল্প নিয়ে।
হো চি মিন সিটিতে খাবারের অন্বেষণ যেন এক ভিন্ন জগৎ। এখানকার রাস্তার খাবার থেকে শুরু করে অভিজাত রেস্টুরেন্ট—সবখানেই রয়েছে খাবারের এক বিশাল সমাহার।
এখানকার স্থানীয়রা তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশন করতে সবসময় প্রস্তুত। শহরের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ানো যায় স্কুটারের (vespa) মাধ্যমে, যা এই শহরের সংস্কৃতির একটি অংশ।
শহরের একটি জনপ্রিয় স্থান হলো ‘ওক লোন’ নামক একটি রেস্টুরেন্ট। এখানকার বিশেষত্ব হলো বিশাল আকারের শামুক এবং সি-ফুডের বিভিন্ন পদ।
স্থানীয় গাইড ইয়েন নাভি জানান, এক সময়ের গ্যাংস্টারের হাত ধরে এই রেস্টুরেন্টটির যাত্রা শুরু হয়েছিল, যা এখন স্থানীয়দের কাছে খুবই প্রিয়। এখানে আসা ভোজনরসিকরা বিশেষ করে উপভোগ করেন ঝাল মশলার সাথে রান্না করা নানা পদের সামুদ্রিক খাবার।
সকালের খাবারের জন্য আপনি যেতে পারেন ‘বে হো’ (Bay Ho)-তে। এই জায়গাটি একটি স্যান্ডউইচ শপ, যা নেটফ্লিক্সের ‘স্ট্রিট ফুড: এশিয়া’ সিরিজেও স্থান করে নিয়েছে।
এখানকার প্রধান আকর্ষণ হলো বান মি (Banh Mi)। ফরাসি সংস্কৃতির প্রভাব থেকে আসা এই খাবারটি এখন ভিয়েতনামবাসীর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বাঘেটের ভেতরে থাকে নানা ধরনের পুর, যেমন—শুয়োরের মাংসের পেস্ট, ধনে পাতা, এবং আরও অনেক সুস্বাদু উপকরণ।
হো চি মিন সিটির খাদ্য সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বাজারগুলো। সকালে বাজারগুলোতে গেলে সেখানকার তাজা খাবার ও মশলার ঘ্রাণে মন ভরে যায়।
এখানকার বাজারগুলোতে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফল এবং নানান ধরনের মশলা। আপনি যদি একটু ভিন্ন স্বাদের সন্ধান করেন, তাহলে যেতে পারেন চায়নাটাউনে।
সেখানে রয়েছে থিয়েন হাউ মন্দির, যা ১৮ শতকে নির্মিত হয়েছিল।
কফির জন্য আপনি বেছে নিতে পারেন ‘ক্যাফে বা লু’ (Café Ba Lù)। এখানে পরিবেশন করা হয় বিশেষ ধরনের ‘র্যাকেট কফি’, যা কাপের নিচে জমাট বাঁধা ঘন দুধের সাথে পরিবেশন করা হয়।
এই কফি তৈরির কৌশলটি এখানকার একটি ঐতিহ্য। এখানকার কফি প্রস্তুতকারকরা তাদের বিশেষ দক্ষতার জন্য পরিচিত।
ভিয়েতনামের কফির জগৎটাও বেশ আকর্ষণীয়। এখানে কফির সাথে ডিমের কুসুম মিশিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ ধরনের ‘এগ কফি’। এই কফি অনেকটা ডেজার্টের মতো, যা কফিপ্রেমীদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা।
রাতের খাবারের জন্য আপনি যেতে পারেন ‘নেন লাইট’-এ। এটি একটি আধুনিক রেস্টুরেন্ট, যেখানে ভিয়েতনামের ঐতিহ্যবাহী খাবারের সাথে জাপানি সংস্কৃতির একটি মিশ্রণ দেখা যায়।
মিশেলিন গাইড কর্তৃক প্রশংসিত এই রেস্টুরেন্টটি তার ব্যতিক্রমী মেনুর জন্য পরিচিত। এখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের সি-ফুড এবং স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি হওয়া খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন।
হো চি মিন সিটির খাদ্য সংস্কৃতি শুধু একটি শহরের খাবার নয়, বরং এটি একটি সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। এখানকার প্রতিটি খাবারের দোকানে লুকিয়ে আছে স্থানীয় মানুষের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ভালোবাসার গল্প।
আপনি যদি খাদ্যরসিক হয়ে থাকেন, তাহলে এই শহর আপনার জন্য একটি অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক