আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা, বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কা: বাংলাদেশের জন্য কী অপেক্ষা করছে?
আন্তর্জাতিক বাজারে মঙ্গলবার মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে, যেখানে এশিয়ার শেয়ার বাজারগুলোতে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। বিনিয়োগকারীরা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্কের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের ধারণা, এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়তে পারে।
জাপানের টোকিও স্টক মার্কেট বন্ধ থাকলেও, হংকংয়ের হ্যাং সেং ইনডেক্স সামান্য পরিবর্তন সহকারে ছিল। চীনের সাংহাই কম্পোজিট সূচক সামান্য কমেছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি সূচক এবং অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচক উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তাইওয়ানের তাইএক্স এবং ভারতের সেনসেক্সেও সামান্য বৃদ্ধি দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসলেও, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ ঘোষণার কারণে বাজারের অস্থিরতা এখনো কাটেনি। উভয় দেশই একে অপরের উপর দোষারোপ করছে এবং বাণিজ্য আলোচনার কোনো অগ্রগতি হয়নি।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি সম্প্রতি সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, চীন বাণিজ্য যুদ্ধ কমাতে চাইছে। তবে, ট্রাম্প প্রশাসন চীনের উপর নতুন করে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে, যা অর্থনীতিতে আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে, মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দা আসারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, বিনিয়োগকারীরা এখন বিভিন্ন কোম্পানির আয় এবং অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলোর আয়ের দিকে সবার নজর রয়েছে। কারণ, তাদের পারফরম্যান্স বাজারের গতি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি হঠাৎ পরিবর্তনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের পরিকল্পনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বুধবার প্রকাশিতব্য অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে জানা যেতে পারে যে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে ০.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের শেষ দিকে ছিল ২.৪ শতাংশ।
অন্যদিকে, ভোক্তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, যার কারণ হিসেবে শুল্ক নীতিকে দায়ী করা হচ্ছে। আগামী দিনে প্রকাশিতব্য মার্কিন শ্রমবাজারের তথ্য, বিশেষ করে এপ্রিল মাসের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি কেমন ছিল, সেদিকেও সবার দৃষ্টি থাকবে। ধারণা করা হচ্ছে, মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে নতুন কর্মী নিয়োগের সংখ্যা কমে আসতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা এবং বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কিছু প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে, তা দেশের বাজারেও মূল্যস্ফীতি ঘটাতে পারে।
এছাড়াও, বাণিজ্য যুদ্ধ চললে, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যেও কিছু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস