শিরোনাম: চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ: ট্রাম্পের নতুন নীতি, বাংলাদেশের জন্য কী প্রভাব?
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও কঠিন করে তুলেছেন। তার নেওয়া নতুন পদক্ষেপগুলো দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য বিরোধকে আরও একধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন চীনের উপর শুল্কের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। কিছু চীনা পণ্যের উপর শুল্কের পরিমাণ ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তা আরও বেশি, প্রায় ২৪৫ শতাংশ।
এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও মার্কিন পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যকে কার্যত কঠিন করে তুলেছে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বাণিজ্য নীতি মূলত তার আগের মেয়াদের ধারাবাহিকতা। তিনি মনে করেন, চীনসহ অন্যান্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের সুযোগ নিয়েছে।
ট্রাম্পের লক্ষ্য হলো, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে মার্কিন নাগরিকদের জন্য ভালো কাজের সুযোগ তৈরি করা এবং চীনের বিনিয়োগ আকর্ষণ করা।
আগে জানা গিয়েছিল, ২০১৮ সালে ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেন, যার ফলস্বরূপ চীনের ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।
যদিও বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিযোগিতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন, ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা ভিন্ন। তিনি মনে করেন, চীনের সঙ্গে একটি ন্যায্য বাণিজ্য চুক্তি করা জরুরি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই কঠোর নীতি চীনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং বেইজিংকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি থেকে দূরে সরে যেতে উৎসাহিত করতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে চীনের উৎপাদকরা তাদের বাজার সম্প্রসারণের জন্য অন্য দেশগুলোর দিকে ঝুঁকতে পারে।
এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ট্রাম্প শুধু চীন নয়, মেক্সিকো এবং কানাডার মতো দেশের সঙ্গেও বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করছেন।
সম্প্রতি, তিনি ১৮০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এই পদক্ষেপগুলো বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য হলো মুক্ত বাণিজ্য নীতির পরিবর্তে এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করা, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ আরও বেশি সুরক্ষিত হবে।
এই পরিবর্তন বিশ্ব অর্থনীতির গতিপথকে নতুন দিকে নিয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশ্ব বাণিজ্যে পরিবর্তন আমাদের দেশের অর্থনীতিকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
বিশেষ করে, পোশাক শিল্পের মতো রপ্তানিনির্ভর খাতগুলোতে এর প্রভাব পড়তে পারে। বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আসায়, আমাদের রপ্তানি বাজার এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার এই বাণিজ্য যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে কৌশল নির্ধারণ করা অপরিহার্য।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা