যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ১০০ দিনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ডেমোক্রেট দল। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের বিতর্কিত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
এর মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বক্তৃতা, সভা এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি।
ডেমোক্রেট দলের নেতারা মনে করেন, ট্রাম্পের নীতিমালার বিরুদ্ধে তাদের দলের সদস্যরা যথেষ্ট প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছেন না—এমন একটি ধারণা ভোটারদের মধ্যে তৈরি হয়েছে।
সিনেটে ডেমোক্রেট দলের নেতারা গভীর রাত পর্যন্ত অধিবেশন চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। সেখানে তারা ট্রাম্পের নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বক্তব্য রাখবেন।
সিনেটের ডেমোক্রেট নেতা চাক শুমার এই সময়কে ‘১০০ দিনের বিভীষিকা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আগামী বুধবার প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেটদের সঙ্গে তারা ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবেন।
আমরা দিনকে দিন রিপাবলিকানদের এজেন্ডা তুলে ধরব, যাতে আমেরিকানরা ডেমোক্রেটদের ঐক্য এবং রিপাবলিকানদের বিশৃঙ্খলা দেখতে পায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি আমেরিকার জন্য বিপদজনক পথে হাঁটা অব্যাহত রাখেন, তাহলে ডেমোক্রেট, আদালত এবং সর্বোপরি জনগণের কাছ থেকে তাকে প্রতিরোধ মোকাবেলা করতে হবে।”
ডেমোক্রেট দলের নেতারা মনে করছেন, ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে, কারণ তারা মনে করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরোধিতা করতে দল যথেষ্ট সক্রিয় নয়।
যেহেতু হোয়াইট হাউস, প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেটে রিপাবলিকানদের প্রাধান্য রয়েছে, তাই ডেমোক্রেটদের পক্ষে প্রশাসনকে বাধা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
সিনেটের হুইপ ডিক ডারবিন স্বীকার করেছেন, “ব্যাপক উৎসাহ, অস্থিরতা এবং হতাশা রয়েছে।
তবে আমি মনে করি, আমাদের সমর্থক ও প্রগতিশীল ডেমোক্রেটরা বুঝতে পারছেন যে, সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে আমাদের সংখ্যালঘিষ্ঠ অবস্থানের কারণে আমাদের সুযোগ সীমিত। তবে আমরা আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।
ভালো খবর হলো, আমেরিকান জনগণ এই প্রেসিডেন্টের কার্যক্রম দেখছে এবং তাদের ভালো লাগছে না।”
ডারবিন জানিয়েছেন, তিনি পুনরায় নির্বাচনে লড়ছেন না। এর ফলে সিনেটে ডেমোক্রেটদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন আসবে।
হাওয়াই রাজ্যের সিনেটর ব্রায়ান শ্যাৎজ জানিয়েছেন, তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসার জন্য অন্যান্য সিনেটরদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন।
নিউ জার্সি থেকে নির্বাচিত সিনেটর কোরি বুকার এবং ম্যাসাচুসেটস থেকে নির্বাচিত এলিজাবেথ ওয়ারেন জানিয়েছেন, তারা এই পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না।
ওয়ারেন সোমবার বলেছেন, নির্বাচিত ডেমোক্রেটদের ট্রাম্পের মোকাবিলায় আরও বেশি কিছু করা দরকার। তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিটি ডেমোক্রেট সিনেটর ও প্রতিনিধির প্রতিদিন এই লড়াইয়ে শতভাগ দিতে হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং এলন মাস্ক পরিস্থিতি তৈরি করছেন। এখন ডেমোক্রেটদের পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার সময়।”
মিনেসোটা থেকে নির্বাচিত সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচারও ট্রাম্পের নীতির দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, “আমি সিনেটে ৩ নম্বরে আছি এবং আমার কাজ হলো আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নীতি তৈরি করা এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছেন, তা মোকাবেলা করা।”
বুকার সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন এবং প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেট নেতা হাকিম জেফ্রিসের সঙ্গে মার্কিন ক্যাপিটলের সামনে এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন।
তারা সতর্ক করে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা, মেডিক্যায়ার ও মেডিকেডের মতো সুবিধাগুলো কাটছাঁট করা হতে পারে।
বুকার বলেছেন, ডেমোক্রেটদের তাদের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নতুন এবং উদ্ভাবনী উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
আমরা এই জাতীয় দুঃস্বপ্ন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কথা বলা, প্রতিবাদ করা এবং লড়াই চালিয়ে যাব।”
অন্যদিকে, রিপাবলিকান সিনেটর জন কর্নিন ডেমোক্রেটদের এসব প্রচেষ্টাকে তাদের ভোটারদের শান্ত করার চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, “তারা অবশ্যই কাউকে বোঝাতে পারছে না। আমি মনে করি, তারা তাদের ক্ষুব্ধ সমর্থকদের শান্ত করার চেষ্টা করছে, কিন্তু তারা আসলে কী চায়, সে বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন