শিরোনাম: ট্রাম্পের ১০০ দিন: কানাডার নির্বাচন থেকে গাজায় মানবিক সংকট, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তাপ
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের একশ দিন পূর্ণ হয়েছে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে, যা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আসুন, সেই খবরগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
প্রথমেই আসা যাক কানাডার নির্বাচনের কথায়। নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশটির লিবারেল পার্টি সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, তবে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পেরেছেন কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ এবং দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে ট্রাম্পের বিভিন্ন মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে কার্নি ভোটারদের কাছে অঙ্গীকার করেছিলেন, তিনি কানাডার শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করবেন এবং আমেরিকার ওপর নির্ভরশীলতা কমাবেন। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর কার্নি বলেন, “আমি আগেই সতর্ক করেছিলাম, আমেরিকা আমাদের ভূমি, সম্পদ ও জল চায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের দুর্বল করতে চাইছেন, যাতে তারা আমাদের নিজেদের করে নিতে পারে। কিন্তু এটা হতে দেওয়া হবে না।”
অন্যদিকে, গাজায় মানবিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইসরায়েলের অবরোধের কারণে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)-র খাদ্য সরবরাহ প্রায় ফুরিয়ে এসেছে।
জাতিসংঘের এই সংস্থাটি শুক্রবার অবরুদ্ধ গাজার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের শেষ খাদ্য সরবরাহ করেছে। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, সাহায্য পাঠানো না হলে কয়েক দিনের মধ্যেই সংকট আরও বাড়বে। ডব্লিউএফপি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “গাজায় খাদ্য সহায়তার একমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস ছিল সেখানকার রান্নাঘরগুলো। সেখানকার মানুষগুলোর দৈনিক চাহিদার মাত্র ২৫ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হলেও, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনরেখা হিসেবে কাজ করেছে।”
উল্লেখ্য, গত ২ মার্চ হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ এবং জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে ইসরায়েল খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রী ও অন্যান্য সহায়তা বন্ধ করে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের একশ দিনের কার্যক্রম নিয়ে নতুন একটি জরিপ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, দেশটির মানুষ তার কাজকর্মে খুব একটা খুশি নয়।
যদিও ক্ষমতায় আসার সময় ট্রাম্পের জনসমর্থন ভালো ছিল, তবে ১০০ দিন পর তার অনুমোদনের হার দাঁড়িয়েছে ৪১ শতাংশ, যা নতুন নির্বাচিত কোনো প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন। জরিপে অংশ নেওয়া মাত্র ২২ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পের কাজকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছেন।
রিপাবলিকানদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ এবং ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ ট্রাম্পকে সমর্থন করেননি। এছাড়া, স্বতন্ত্র ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের অনুমোদনের হার ৩১ শতাংশে নেমে এসেছে।
বিশেষ করে, দেশের অর্থনীতি পরিচালনায় প্রেসিডেন্টের নেওয়া পদক্ষেপগুলো নিয়ে বেশি অসন্তুষ্ট সাধারণ মানুষ। জরিপে অংশ নেওয়া ৫৯ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন, ট্রাম্পের নীতি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গত ২০ জানুয়ারির পর থেকে শেয়ার বাজারে ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে, কর্মীদের সঞ্চয়েও ধস নেমেছে এবং খাদ্যপণ্যের দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী।
যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের আগে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার দায়িত্বে থাকা ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (ফেমা)-কে নতুন করে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া চলছে।
জানা গেছে, সরকারি কর্মচারী ছাঁটাইয়ের অংশ হিসেবে, এই সংস্থার প্রায় ১,০০০ কর্মী স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়তে পারেন। এছাড়া, সংস্থাটির সংস্কারের জন্য ট্রাম্প একটি ‘ফেমা রিভিউ কাউন্সিল’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন, যেখানে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ থাকবেন।
সবশেষে, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ঘটা একটি দুঃখজনক ঘটনার কথা জানা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ে একটি আফটার-স্কুল প্রোগ্রামে দ্রুতগতির একটি গাড়ি ঢুকে পড়লে শিশুসহ কমপক্ষে চারজন নিহত হয় এবং আরও অনেকে আহত হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটি চ্যাথামের ওয়াইএনওটি আফটার স্কুল ক্যাম্পের বাইরে থাকা কয়েকজন পথচারীকে ধাক্কা দেয় এবং এরপর ক্যাম্পের ভেতরে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। গাড়ির চালক অক্ষত থাকলেও তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিটজকার এক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন