যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রত্যাশী কয়েকজন ভেনেজুয়েলার নাগরিককে আটকের পর তাদের এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা এই পদক্ষেপকে লাতিন আমেরিকার স্বৈরাচারী শাসনের ‘নিখোঁজ’ করার সংস্কৃতির সঙ্গে তুলনা করেছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
**আটকের কারণ ও পরিবারগুলোর প্রতিক্রিয়া**
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে অভিবাসন নীতি কঠোর করার অংশ হিসেবে এই আটকের ঘটনাগুলো ঘটেছে।
আটককৃতদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তাদের পরিবারের সদস্যরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, আটকের পর তাদের পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি।
এমনকি তাদের কোথায় রাখা হয়েছে, সে সম্পর্কেও কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
উদাহরণস্বরূপ, নেইভার রেঞ্জেল নামের এক ভেনেজুয়েলার নাগরিককে টেক্সাসের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আটক করা হয়। তার বান্ধবী রিচেলি আলেজান্দ্রা উজকাতেগুই গুতেরেস জানান, আটকের সময় কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ‘সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে’।
কিন্তু এরপর থেকে রেঞ্জেলের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পরিবার জানতে পারে, তাকে এল সালভাদরের একটি ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে, যেখানে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
আরেক ভুক্তভোগী হলেন রিকার্ডো প্রাদা ভাসকুয়েজ। মিশিগানে আটকের পর তিনি তার ভাইকে জানান, তাকে ভেনেজুয়েলায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু তিনি গন্তব্যে পৌঁছাননি।
পরে জানা যায়, তাকেও এল সালভাদরে পাঠানো হয়েছে।
**মানবাধিকার লঙ্ঘন ও স্বচ্ছতার অভাব**
মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ঘটনাকে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আমেরিকা অঞ্চলের পরিচালক জুয়ানিটা গোয়েবার্টাস বলেছেন, ‘যখন কাউকে আটক করা হয় এবং তার কোনো খবর পাওয়া যায় না, তখন সেটাকে জোরপূর্বক গুম হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’
আটককৃতদের পরিবারগুলোর অভিযোগ, তাদের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করা হচ্ছে না।
এমনকি তাদের আইনজীবীদেরও তাদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাদের আটকের কারণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না।
**যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি ও ভেনেজুয়েলার পরিস্থিতি**
ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে অভিবাসন নীতি কঠোর হওয়ায় অনেক ভেনেজুয়েলার নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চেয়েছেন।
ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেখানকার নাগরিকরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ ভেনেজুয়েলার অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা তাদের স্বজনদের নিরাপত্তা ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছেন।
তারা এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান