প্লাস্টিকের ভয়াবহতা: আমাদের চারপাশের নীরব ঘাতক
প্লাস্টিক—আধুনিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কোণে মিশে আছে। কিন্তু এর ক্ষতিকর দিকগুলো এখন আর কারো অজানা নয়।
একদিকে যখন আমরা প্লাস্টিকের তৈরি বিভিন্ন জিনিসের সুবিধা নিচ্ছি, ঠিক তখনই এর ভয়াবহতা গ্রাস করছে আমাদের পরিবেশকে।
প্লাস্টিক দূষণ: এক ভয়ংকর চিত্র
বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার দ্রুতগতিতে বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে এর দূষণ। বর্তমানে, সমুদ্র থেকে শুরু করে মানুষের রক্ত পর্যন্ত—প্লাস্টিকের উপস্থিতি সর্বত্র।
**মাছে প্লাস্টিক: উদ্বেগের কারণ:** গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা যে মাছ খাই, তার প্রায় ৯৯ শতাংশেই প্লাস্টিকের কণা বিদ্যমান।
শুধু মাছ নয়, চিংড়ি, শামুকসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে।
**আমাদের শরীরে প্লাস্টিক: এক নীরব প্রবেশ:** বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, প্রতি বছর আমরা গড়ে প্রায় ৩৮ লক্ষ মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গ্রহণ করছি।
খাবারের মোড়ক এবং মাইক্রোওয়েভে খাবার গরম করার সময়ও প্লাস্টিক কণা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।
**৯ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য, বাকিটা কোথায়?:** প্লাস্টিকের ভয়াবহতার আরেকটি দিক হলো এর স্বল্প পুনর্ব্যবহারযোগ্যতা।
উৎপাদিত প্লাস্টিকের মাত্র ৯ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়। বাকিটা হয়তো পুড়িয়ে ফেলা হয়, অথবা জমা হয় ডাস্টবিনে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
**সমুদ্রে প্লাস্টিকের ভয়াবহতা:** প্রতি মিনিটে সমুদ্রে জমা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য।
ধারণা করা হয়, সমুদ্রে ৫০০ কোটির বেশি প্লাস্টিকের টুকরা ভাসমান অবস্থায় রয়েছে।
এর মধ্যে প্রায় দুই লক্ষ ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক সমুদ্রের উপরিভাগে বিদ্যমান।
**সাগরের গভীরেও প্লাস্টিক:** গভীর সমুদ্রেও প্লাস্টিকের ভয়াবহতা কম নয়।
প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৪ বিলিয়নের বেশি প্লাস্টিক মাইক্রোফাইবার জমা হচ্ছে।
**প্রাণীদের জীবনহানি:** প্লাস্টিক দূষণের কারণে প্রতি বছর প্রায় ১ লক্ষ সামুদ্রিক প্রাণী মারা যায়।
প্লাস্টিকের কারণে তিমি, ডলফিনসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
**সাগরের তীরে প্লাস্টিকের স্তূপ:** বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে জমে থাকা বর্জ্যের প্রায় ৭৫ শতাংশই প্লাস্টিক।
হাওয়াই দ্বীপের কামিলো বিচ এর একটি উদাহরণ, যেখানে টিভির পিছনের অংশ থেকে শুরু করে নানা ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য পাওয়া যায়।
**ক্ষতিকর একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক:** বর্তমানে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের প্রায় ৪০ শতাংশই একবার ব্যবহারযোগ্য।
প্লাস্টিকের এই ক্রমবর্ধমান ব্যবহার পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
**মানবদেহে প্লাস্টিক: এক নতুন উদ্বেগ:** উদ্বেগের বিষয় হলো, বিজ্ঞানীরা মানুষের রক্তেও প্লাস্টিকের কণা খুঁজে পেয়েছেন।
নেদারল্যান্ডসের একটি গবেষণায় ২২ জন মানুষের মধ্যে ১৭ জনের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
প্লাস্টিক দূষণের এই ভয়াবহতা থেকে আমাদের দেশও মুক্ত নয়।
বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলীর মতো নদ-নদীগুলোতে প্লাস্টিকের দূষণ একটি নিয়মিত চিত্র।
স্থানীয় বাজারগুলোতে ব্যবহৃত পলিথিন ব্যাগ এবং প্লাস্টিকের বোতলসহ অন্যান্য সামগ্রী পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ।
করণীয়
প্লাস্টিক দূষণ কমাতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, পুনর্ব্যবহারযোগ্য সামগ্রীর ব্যবহার বৃদ্ধি করা, এবং প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি করা অপরিহার্য।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল এন্ড লেজার