ভিসা আর টিকিট নিশ্চিত হলেই যেন সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। অনেক সময় ভ্রমণের আনন্দ মাটি করে দেয় জেট ল্যাগ।
সময় অঞ্চলের পরিবর্তনের কারণে শরীরে তৈরি হওয়া এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু উপায় জানা জরুরি। বিশেষ করে যারা বিভিন্ন দেশে কাজের সূত্রে বা ভ্রমণের জন্য যান, তাদের জন্য জেট ল্যাগ একটি পরিচিত সমস্যা।
আসুন, জেনে নিই কীভাবে এই সমস্যা থেকে বাঁচা যায়।
আসলে, জেট ল্যাগ হলো আমাদের শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ বা বায়োলজিক্যাল ক্লকের গোলমাল। যখন আমরা অনেকগুলো টাইম জোনের মধ্যে দিয়ে ভ্রমণ করি, তখন আমাদের শরীর নতুন সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না।
ফলে ঘুম, খাওয়া এবং অন্যান্য দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এর কারণে ভ্রমণকারীরা ঘুম ঘুম অনুভব করতে পারেন, অথবা ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্রমণের কয়েক দিন আগে থেকেই যদি কিছু পরিকল্পনা করা যায়, তাহলে জেট ল্যাগ অনেকটাই কমানো সম্ভব।
এর জন্য কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে পারেন।
প্রথমত, গন্তব্যের সময়ের সঙ্গে নিজেদের শরীরকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করুন। গন্তব্যে পৌঁছানোর পরে দিনের আলো শরীরে লাগাটা খুব জরুরি। দিনের আলো শরীরে পড়লে শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি দ্রুত নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।
দ্বিতীয়ত, ঘুমের দিকে মনোযোগ দিন। বিমানে উঠার আগে ঘুমের প্রস্তুতি নিন। লম্বা ভ্রমণে ঘুমের জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। ঘুমের জন্য আরামদায়ক পোশাক, বালিশ এবং আই মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
ঘুমের সময় শব্দ থেকে বাঁচতে ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার করা যেতে পারে।
তৃতীয়ত, ক্যাফেইন গ্রহণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর সেখানকার সময়ে সকাল হলে, ক্যাফেইন গ্রহণ করতে পারেন।
তবে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এমন খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলুন।
চতুর্থত, খাবার সময় মতো খাওয়া উচিত। গন্তব্যের সময় অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করলে শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে দ্রুত স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।
পঞ্চমত, ভ্রমণের আগে আপনার ঘুমের সময়সূচী পরিবর্তনের চেষ্টা করতে পারেন। স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন যেমন Timeshifter এবং StopJetLag ব্যবহার করে ভ্রমণের আগে থেকেই একটি পরিকল্পনা তৈরি করা যেতে পারে।
এই অ্যাপগুলো আপনাকে ভ্রমণের সময়সূচী তৈরি করতে এবং টিপস দিতে সাহায্য করে।
জেট ল্যাগ কমানোর জন্য ঘুমের ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তবে, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
ঘুমের ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সবশেষে, মনে রাখতে হবে, জেট ল্যাগ একটি সাময়িক সমস্যা। সঠিক পরিকল্পনা ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ভ্রমণের আগে ও পরে শরীরের যত্ন নিলে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক