ইউরোপের অর্থনীতি: শুরুতে ভালো, কিন্তু ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ শঙ্কা বাড়াচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তন আমাদের দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করে।
সম্প্রতি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থনীতিতে কিছু পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যা নিয়ে আলোচনা করা দরকার।
বছরের প্রথম তিন মাসে, ইউরোজোনের (ইউর মুদ্রা ব্যবহারকারী ২০টি দেশ) অর্থনীতি ০.৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগের প্রান্তিকে এই বৃদ্ধির হার ছিল ০.২ শতাংশ।
পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতির এই অগ্রগতির মূল কারণ ছিল শক্তিশালী কর্মসংস্থান এবং ভোক্তাদের মধ্যে ব্যয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি। মূল্যস্ফীতি ২.২ শতাংশে নেমে আসায়, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) সুদের হার কমিয়েছে, যা ব্যবসা এবং ভোক্তাদের জন্য ঋণের খরচ কমিয়েছে।
কিন্তু এই ইতিবাচক পরিস্থিতির মাঝে একটি বড় ধাক্কা লেগেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যগুলোর ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য-নির্ভর অর্থনীতিতে একটি বড় ধরনের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র হলো ইউরোপের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য।
এই শুল্ক আরোপের ফলে ইউরোপের ব্যবসায়িক এবং ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা কমে গেছে। ইউরোপীয় কমিশনের অর্থনৈতিক সূচক মার্চ মাসে ৯৩.৬-এ নেমে এসেছে, যা ডিসেম্বরের পর সর্বনিম্ন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গত কয়েক সপ্তাহের শুল্ক বিষয়ক উত্তেজনা এবং অনিশ্চয়তা বাজারের ইতিবাচক মনোভাবকে দুর্বল করে দিয়েছে।
জার্মানির অর্থনীতি, যা ইউরোজোনের বৃহত্তম অর্থনীতি, ট্রাম্পের শুল্কের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। জার্মানির সরকার চলতি বছরে তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে শূন্যে নামিয়ে এনেছে।
এর আগে, দেশটির অর্থনীতি গত দুই বছর ধরে কিছুটা দুর্বল ছিল।
জার্মানিতে একটি নতুন রাজনৈতিক পরিবর্তনেরও সম্ভাবনা রয়েছে। ফেডারেল নির্বাচনে মধ্য-ডানপন্থী জোট জয়লাভ করেছে এবং তারা একটি বিশাল বিনিয়োগ তহবিল তৈরির পরিকল্পনা করছে।
এই তহবিল অবকাঠামো খাতে ব্যয় বাড়াতে সাহায্য করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সুদের হার কমাচ্ছে, যা ব্যবসা এবং ভোক্তাদের জন্য ঋণের খরচ কমাবে।
তবে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতিতে পরিবর্তন না হলে, আগামী মাসগুলোতে ইউরোজোনের অর্থনীতিতে শ্লথ গতি বজায় থাকতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তন আমাদের দেশের বাণিজ্য, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্ক আরোপের কারণে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা তৈরি হলে, তা আমাদের রপ্তানি এবং আমদানি উভয় ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলতে পারে।
বর্তমানে, ইউরোপের অর্থনীতিতে শ্লথ গতির পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। তবে, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক নীতিতে পরিবর্তন এলে পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতেও পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস