ডোনাল্ড ট্রাম্প: মিশিগানে সমাবেশের ভাষণে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি মিশিগানের ওয়ারেনে একটি বিশাল জনসভা করেন। এই সমাবেশে তিনি তার শাসনামলের একশো দিন পূর্তি উপলক্ষে বক্তব্য রাখেন।
ভাষণে ট্রাম্প তার সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরেন এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের তীব্র সমালোচনা করেন। তবে বক্তৃতায় তিনি এমন কিছু তথ্য উপস্থাপন করেন, যা পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই করে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
ট্রাম্প তার বক্তব্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন, যার মধ্যে ছিল মুক্তভাবে কথা বলার অধিকার, সীমান্ত নিরাপত্তা, ডিমের দাম, পেট্রোলের দাম, শিল্পখাতে বিনিয়োগ, সরকারি ব্যয়, কর বৃদ্ধি, দূর থেকে কাজ করার প্রবণতা, অভিশংসন প্রস্তাব, কলম্বাস দিবস এবং সরকারি নথিতে অটোপেন ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো।
ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি “যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি সেন্সরশিপ নিষিদ্ধ করেছেন এবং বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছেন।” তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, তার প্রশাসন সংবাদ মাধ্যম, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করেছে।
ফ্রিডম অফ ইন্ডিভিজুয়াল রাইটস অ্যান্ড এক্সপ্রেশন-এর নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকো পেরিনো বলেন, “ট্রাম্প নিশ্চিতভাবে আমেরিকায় বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনেননি। বরং আমরা দেখেছি, তার সময়ে বাকস্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য হুমকি সৃষ্টি হয়েছে।
ট্রাম্প আরও বলেন, তার আমলে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের সংখ্যা “আগে রেকর্ড করা সংখ্যার চেয়ে অনেক কম ছিল।” তবে তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সীমান্ত অতিক্রমের মাসিক তথ্য সংগ্রহ করা শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে।
ট্রাম্পের শাসনামলের প্রথম কয়েক মাসে অভিবাসন কিছুটা কমলেও, এর আগের বছরগুলোতে এই সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল।
ডিমের দাম প্রসঙ্গে ট্রাম্পের দাবি ছিল, তার আমলে ডিমের দাম ৮৭ শতাংশ কমেছে। যদিও পাইকারি বাজারে দাম কমেছে, কিন্তু খুচরা বাজারে এর প্রভাব সেভাবে পড়েনি।
বার্ড ফ্লু’র কারণে ডিম উৎপাদনকারী বহু মুরগি মারা যাওয়ায় ডিমের সংকট দেখা দেয় এবং দাম বাড়ে, যা ট্রাম্পের সময়ও অব্যাহত ছিল।
পেট্রোলের দাম নিয়েও ট্রাম্প ভুল তথ্য দিয়েছেন। তিনি মিশিগান সহ কয়েকটি রাজ্যে এক গ্যালন পেট্রোলের দাম ১.৯৮ ডলার উল্লেখ করলেও, তথ্য অনুযায়ী, সে সময় সবচেয়ে কম দাম ছিল ২.৬৬ ডলার এবং গড় দাম ছিল ৩.১৪ ডলার।
ট্রাম্পের বক্তব্যে সরকারি ব্যয় কমানোর বিষয়েও অস্পষ্টতা ছিল। তিনি সরকারি ব্যয়ে কয়েক বিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের কথা বললেও, সরকারি সংস্থা ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’র হিসাব অনুযায়ী, এই সাশ্রয়ের পরিমাণ ছিল অনেক কম।
কর বৃদ্ধি এবং ট্যাক্স বিল নিয়েও ট্রাম্প বিভ্রান্তিকর তথ্য দেন। তিনি বলেন, ডেমোক্র্যাটরা ট্যাক্স বাড়াতে চাইছে। তবে বাস্তবতা হলো, ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের করছাড় বহাল রাখতে চায়, যা বছরে ৪ লক্ষ ডলারের কম আয় করা পরিবারগুলোর জন্য প্রযোজ্য।
এছাড়াও, ট্রাম্প তার বক্তব্যে কলম্বাস দিবস ফিরিয়ে আনা এবং সরকারি নথিতে অটোপেন ব্যবহারের বিষয়েও ভুল তথ্য দিয়েছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা