ইউরোপের অর্থনীতিতে বছরের শুরুতে কিছুটা উন্নতির আভাস দেখা গেলেও, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে সেই সম্ভাবনা ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ইউরোজোনের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে জিডিপি-র (মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন) বৃদ্ধি হয়েছে ০.৪ শতাংশ, যা আগের বছরের শেষ প্রান্তিকের ০.২ শতাংশের তুলনায় কিছুটা বেশি।
কিন্তু প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে এই ইতিবাচক চিত্রটি দ্রুত ম্লান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত এপ্রিলে, ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর বিভিন্ন পণ্য আমদানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এর ফলে ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমে যায়, কারণ ইউরোপীয় অর্থনীতি মূলত রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য।
যদিও ট্রাম্প এই শুল্কের ওপর ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ ঘোষণা করেছেন, তবে ইইউ-এর পক্ষে এই শুল্ক কমানোর জন্য কোনো সমঝোতা হওয়া এখনো অনিশ্চিত।
অন্যদিকে, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং গাড়ির ওপর শুল্ক বহাল রয়েছে। এই শুল্কের বোঝা মূলত ইউরোপ থেকে পণ্য আমদানি করা কোম্পানিগুলোর ওপর পড়ছে।
ফলে, তারা হয় এই খরচ বহন করতে বাধ্য হচ্ছে, অথবা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এর ফলস্বরূপ, ইউরোপে ব্যবসা এবং ভোক্তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা যাচ্ছে।
ইউরোপীয় কমিশনের অর্থনৈতিক প্রত্যাশা সূচক মার্চ মাসে ৯৩.৬-এ নেমে এসেছে, যা ডিসেম্বরের পর সর্বনিম্ন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত চার সপ্তাহের শুল্ক-সংক্রান্ত উত্তেজনা এবং অনিশ্চয়তা ইউরোজোনে আশার আলো দেখা যাওয়ার সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে নস্যাৎ করে দিয়েছে। ব্যাংক আইএনজি-র প্রধান অর্থনীতিবিদ কার্স্টেন ব্রজেস্কি জানিয়েছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন না হলে, আগামী মাসগুলোতে ইউরোজোনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা যেতে পারে।
তবে, শুল্ক আরোপের আগে ইউরোপে ইতিবাচক কিছু লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছিল, বেকারত্বের হার ছিল ৬.১ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসায় ভোক্তারা খরচ করতে শুরু করেছিলেন।
মূল্যস্ফীতি ২.২ শতাংশে নেমে আসায় ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ঋণ সহজলভ্য করার চেষ্টা করছিল। জার্মানির পার্লামেন্টও অবকাঠামো খাতে ব্যয়ের জন্য ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর একটি বিনিয়োগ তহবিল অনুমোদন করেছে।
কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক জার্মানির অর্থনীতিতেও খারাপ প্রভাব ফেলেছে। জার্মানি ইউরোজোনের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জার্মানির সরকার চলতি বছরে প্রবৃদ্ধির হার শূন্যে নামিয়ে এনেছে।
বৈশ্বিক অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের জন্য কিছু প্রভাব ফেলতে পারে। ইউরোপের বাজারে আমাদের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি কমে গেলে, তা দেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
তাই, আন্তর্জাতিক অর্থনীতির এই পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে অবগত থাকা এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন