সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে সংঘর্ষ, নিহত অন্তত ১১ জন। দামেস্কের কাছে বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে ড্রুজ সম্প্রদায়ের মানুষের বাস সেখানে, দুই দিন ধরে চলা সংঘর্ষে অন্তত ১১ জন বেসামরিক নাগরিক এবং নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছে।
বুধবার সিরিয়ার সরকারি সংবাদ মাধ্যমে এই খবর জানানো হয়েছে। সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা যায়, বুধবার ভোররাতে দামেস্কের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত আশরাফিয়া সানায়া শহরে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা একটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালায়।
এর পরেই সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর আগের দিন, মঙ্গলবার, দামেস্কের কাছে জারমানা শহরেও সংঘর্ষ হয়, যেখানে অন্তত ১০ জন নিহত হয়। যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এই খবর জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার সকাল থেকে তারা ব্যাপক গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত ওই এলাকার রাস্তা বন্ধ করে দেয় এবং অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে সংঘর্ষ বন্ধ করার চেষ্টা করে।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন যে ইসরায়েলি বাহিনী দামেস্কের দক্ষিণে একটি “চরমপন্থী গোষ্ঠীর” উপর হামলা চালিয়েছে, যারা ড্রুজ সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
নেতানিয়াহু বলেন, “সিরিয়ার ড্রুজ সম্প্রদায়ের কোনো ক্ষতি হতে দেবে না ইসরায়েল।” এই ঘটনার পরে, সিরিয়ার ড্রুজ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের সুরক্ষা প্রস্তাবের কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানানো হয়েছে।
এই সংঘর্ষ এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা মোকাবেলা করছে। এর আগে, বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনীর হামলায় লাটাকিয়া প্রদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পরে, যেখানে অন্তত ১০০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।
ড্রুজ সম্প্রদায় হলো একটি আরব ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, যাদের সংখ্যা সিরিয়ায় প্রায় ৫ লাখ। এদের অধিকাংশই সুওয়াইদা প্রদেশে এবং দামেস্কের আশেপাশের ছোট শহরগুলোতে বাস করে।
বিদ্রোহীদের ক্ষমতাচ্যুতির পর, নতুন সরকার এবং ড্রুজ নেতাদের মধ্যে সুওয়াইদাকে সিরিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে, ড্রুজ নেতারা দামেস্ক থেকে কিছুটা স্বায়ত্তশাসন চাইছে, কারণ তারা নতুন সরকারের অতীত সম্পর্কে সন্দিহান।
মঙ্গলবার জারমানায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়, যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ড্রুজ সম্প্রদায়ের একজন ধর্মীয় নেতার নামে ইসলাম ধর্মকে অবমাননাকর একটি ভুয়া অডিও ক্লিপ ছড়ানো হয়। পরে, ওই ধর্মীয় নেতা একটি ভিডিও বার্তায় জানান যে, ওই ক্লিপের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই।
সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নিশ্চিত করেছে যে, ক্লিপটি ভুয়া ছিল এবং জনগণকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে এবং কোনো ধরনের প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে।
স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতারা এবং সরকারি প্রতিনিধিরা মঙ্গলবার জারমানার পরিস্থিতি শান্ত করতে একটি সমঝোতা করেন, যেখানে নিহতদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ এবং হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। তবে, এর কয়েক ঘণ্টা পরেই আশরাফিয়া সানায়াতে পুনরায় সংঘর্ষ শুরু হয়।
সুওয়াইদার বাসিন্দারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। সেখানকার সামরিক কাউন্সিলের প্রধান তারেক আল-শৌফি জানিয়েছেন, “জারমানায় গণহত্যা হয়েছে, আশরাফিয়া সানায়া সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে।
নিরাপত্তা বাহিনী ড্রুজ এবং সামরিক কাউন্সিলকে তাদের সাহায্য করতে বাধা দিচ্ছে।” সিরিয়ার সরকার বর্তমানে আর্থিক সংকটে ভুগছে এবং তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সক্ষমতাও সীমিত।
সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেছে, তবে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর কারণে তারা এখনো অস্থিরতা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, “যারা সিরিয়ার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে চাইছে এবং জনগণের উপর হামলা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান