হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদি-বিদ্বেষ ও মুসলিম-বিদ্বেষ: সহনশীলতা বাড়ানোর পথে একটি পর্যালোচনা।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, সম্প্রতি তাদের ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিদ্বেষ (Antisemitism) এবং মুসলিম-বিদ্বেষ কিভাবে দেখা যায়, সে বিষয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ টাস্ক ফোর্স রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্টে উঠে আসা তথ্যগুলো শিক্ষাঙ্গনে সহনশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
বিশেষ করে, ৭ই অক্টোবরের ঘটনার পর কিভাবে এই বিদ্বেষ বেড়ে গিয়েছিল, সেই বিষয়টি বিশেষভাবে নজরে এসেছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন যে, তারা ক্যাম্পাসে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে প্রায়শই অস্বস্তি বোধ করেন। ইহুদি এবং মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরাই নিজেদের মধ্যে ভীতি ও একাকিত্বের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৬৭ শতাংশ ইহুদি শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা অন্যদের সঙ্গে তাদের নিজস্ব মতামত প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। অন্যদিকে, ৮০ শতাংশ মুসলিম শিক্ষার্থী একই ধরনের অনুভূতির কথা জানিয়েছেন।
এছাড়া, মুসলিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯২ শতাংশ মনে করেন, তাদের নিজস্ব মতামত প্রকাশ করলে পেশাগত বা অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে পারেন।
এই দুটি টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হয়েছিল মূলত বিদ্বেষের স্বরূপ অনুসন্ধান এবং এর প্রতিকারের উপায় নির্ণয় করার জন্য। তাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
বিশেষ করে, ফিলিস্তিনিপন্থী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে, যার ফলে তারা নানা ধরনের হুমকি ও আক্রমণের শিকার হয়েছেন। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ইহুদি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও, যারা জায়নবাদ বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন জুগিয়েছেন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট, অ্যালান গারবার (Alan Garber), এই রিপোর্ট প্রকাশ প্রসঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ ছিল ‘অত্যন্ত হতাশাজনক ও কষ্টের’। তিনি জানান, এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার মধ্যে একটি ঐক্যবদ্ধ সমাজ তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
রিপোর্টগুলোতে বিদ্বেষ কমাতে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ওপর আরও বেশি ক্লাস অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে, যেখানে উভয় পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হবে। এছাড়াও, ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে আরও সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ এমন সময়ে এসেছে, যখন তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ফেডারেল ফান্ডিং বন্ধের সম্মুখীন হয়েছে।
সরকার হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে ইহুদি-বিদ্বেষের অভিযোগ এনেছিল। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এই অভিযোগের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চলছে।
হার্ভার্ডের এই টাস্ক ফোর্স রিপোর্ট, শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নয়, বরং বিশ্বজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন