মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সীমান্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস পরীক্ষার নামে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের উপর নজরদারি চালাচ্ছেন, এমন অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি, মিশিগানের আইনজীবী আমির মাকলেদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় তাঁর ফোন পরীক্ষা করা হয়। এই ঘটনা দেশটির নাগরিক অধিকার ও গোপনীয়তার অধিকারের প্রতি নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
আমির মাকলেদ, যিনি একজন সুপরিচিত আইনজীবী, প্রায়ই দেশের বাইরে ভ্রমণ করেন। কিন্তু সম্প্রতি, তিনি যখন পরিবারসহ ডমিনিকান রিপাবলিক থেকে দেশে ফিরছিলেন, তখন ডেট্রয়েট মেট্রো বিমানবন্দরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের শিকার হন।
কর্মকর্তাদের আচরণে তিনি বিস্মিত হন। সীমান্ত কর্মকর্তারা তাকে আলাদা একটি কক্ষে নিয়ে যান এবং তার ফোন পরীক্ষা করতে চান। মাকলেদ জানান, তাঁর ফোনে ক্লায়েন্টদের গোপনীয় তথ্য রয়েছে, যা তিনি দিতে রাজি নন। কারণ, আইনজীবীর গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের আইনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রে, সীমান্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের জিনিসপত্র পরীক্ষার ব্যাপক ক্ষমতা রয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো— দেশে নিরাপত্তা ঝুঁকি, অবৈধ পণ্য অথবা পরিবেশগত হুমকি প্রবেশে বাধা দেওয়া। কিন্তু এই পরীক্ষার আওতায় এখন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ডিভাইসগুলোতে ব্যক্তিগত তথ্য থাকার কারণে, এই ধরনের পরীক্ষা নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
মার্কিন সীমান্ত সুরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, গত অর্থবছরে প্রায় ৪৭,০৪৭টি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের নাগরিকদের। আগের বছরের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। সমালোচকরা বলছেন, এই ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করারও সম্ভাবনা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আপেল কোম্পানির প্রাক্তন কর্মী আন্দ্রেয়াস গাল-কে সীমান্ত কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিলেন।
গাল-ও তাঁর ডিভাইস পরীক্ষা করতে দিতে রাজি হননি। তাঁর ধারণা ছিল, অনলাইনে রাজনৈতিক মত প্রকাশের কারণে তাঁকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের পরীক্ষার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী লঙ্ঘিত হতে পারে। এই সংশোধনী নাগরিকদের অযৌক্তিক অনুসন্ধান ও আটকের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (American Civil Liberties Union – ACLU)-এর মতে, সরকার প্রায়ই সীমান্ত পরীক্ষার সুযোগ নিয়ে এই সুরক্ষাগুলি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
তবে, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস পরীক্ষার সীমা কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতগুলোতে এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। একজন আইনজীবী হিসেবে মাকলেদ মনে করেন, তাঁর সঙ্গে যা হয়েছে, তা ভীতি প্রদর্শনের একটি কৌশল। এর মাধ্যমে সম্ভবত তাঁকে বিতর্কিত মামলাগুলো থেকে বিরত রাখতে চাইছে কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস পরীক্ষার এই প্রবণতা নিয়ে দেশটির অভ্যন্তরে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকে মনে করেন, এটি ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী। আবার কেউ কেউ মনে করেন, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে এই ধরনের পদক্ষেপ অপরিহার্য।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা