যুদ্ধবন্দীর বিনিময়ের সময় ফেরত আসা ইউক্রেনীয় সাংবাদিকের দেহে নির্যাতনের চিহ্ন, অঙ্গহানি।
কিয়েভ, [তারিখ উল্লেখ করা হলো]। রাশিয়ার হেফাজতে থাকা অবস্থায় নিহত হওয়া ইউক্রেনীয় সাংবাদিক ভিক্টোরিয়া রশিনার মরদেহ ফেরত দিয়েছে মস্কো।
ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে হওয়া বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে এই দেহাবশেষ ইউক্রেনে ফিরিয়ে আনা হয়। ফরেনসিক পরীক্ষার পর জানা গেছে, তাঁর শরীরে নির্যাতনের অসংখ্য চিহ্ন ছিল।
ইউক্রেনের সরকারি কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, রশিনার শরীরে গুরুতর আঘাতের প্রমাণ মিলেছে।
ইউক্রেনীয় কৌঁসুলি অফিসের যুদ্ধাপরাধ বিভাগের প্রধান ইউরি বিলোসোভের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ফরেনসিক পরীক্ষায় শরীরে ক্ষত, ফোলা ও কালশিটে পড়া, বুকের পাঁজর ভাঙা এবং বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার মতো প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃত্যুর আগে এই আঘাতগুলো করা হয়েছিল।
জানা যায়, রুশ কর্তৃপক্ষ ইউক্রেনীয় বন্দীদের ওপর নির্যাতনের জন্য ইলেকট্রিক শক ব্যবহার করে। অতীতে সিএনএনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই ধরনের নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হয়েছে।
ভিক্টোরিয়া রশিনার মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করা না গেলেও, তাঁর মরদেহ শনাক্ত করতে একাধিক ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছে।
এমনকি রাশিয়ার পক্ষ থেকে মরদেহটি ‘শনাক্তহীন পুরুষ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। তদন্তকারীদের ধারণা, মৃত্যুর কারণ ধামাচাপা দিতেই এমনটা করা হয়েছে।
রশিনার সহকর্মীরা জানিয়েছেন, তাঁর মস্তিষ্ক, চোখের মণি এবং শ্বাসনালীর কিছু অংশ পাওয়া যায়নি।
২০২৩ সালের আগস্টে ভিক্টোরিয়া রশিনা রাশিয়ার অধিকৃত অঞ্চলে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে নিখোঁজ হন। তাঁর সহকর্মীরা জানান, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় তিনি রাশিয়ার হাতে বন্দী হন।
সাংবাদিক এভগেনিয়া মটোরভস্কায়া, যিনি একসময় হ্রোমাদস্কে নামের একটি সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদক ছিলেন, জানিয়েছেন, ভিক্টোরিয়া তাঁর কাজকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন।
তিনি বলেন, “সংবাদ সংগ্রহের চেয়ে তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু ছিল না। দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো যেখানে ঘটত, ভিক্টোরিয়া সবসময় সেখানেই থাকতেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ চালিয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু রাশিয়া তাঁকে হত্যা করেছে।”
ভিক্টোরিয়ার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে তাঁর খোঁজ খবর জানার চেষ্টা করছিলেন। ঘটনার প্রায় নয় মাস পর রাশিয়া স্বীকার করে যে তারা তাঁকে বন্দী করে রেখেছে।
এর কয়েক মাস পরই তাঁর মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
ইউক্রেনের কারাবন্দীদের চিকিৎসা সমন্বয় কেন্দ্রের মুখপাত্র পেত্রো ইয়াৎসেঙ্কো জানান, রশিনার মৃত্যু হয় তাগানরোগ থেকে মস্কোতে স্থানান্তরের সময়।
বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল।
তাগানরোগ শহরের বন্দীশালাটি বন্দীদের ওপর নিষ্ঠুর আচরণের জন্য কুখ্যাত। অতীতে এখানে বন্দী থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো।
পর্যাপ্ত খাবার ও স্বাস্থ্যসেবা থেকেও তাঁদের বঞ্চিত করা হতো।
ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর সহকর্মীরা তাঁর জীবনের শেষ মাসগুলোর ঘটনা জানার চেষ্টা করছেন। তাঁরা ডজনখানেক বন্দীর পাশাপাশি কারারক্ষী এবং মানবাধিকারকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছেন।
তাঁদের গতিবিধি চিহ্নিত করতে এবং বন্দীশালার নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরতে তাঁরা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন