মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সম্মতি ছাড়া ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও শেয়ার করা বন্ধ করতে একটি নতুন আইন পাশ হয়েছে।
এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হল ‘রিভেঞ্জ পর্ন’ (প্রতিশোধমূলক পর্নোগ্রাফি) এবং ‘ডিপফেকস’-এর (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা ভুয়া ছবি বা ভিডিও) বিস্তার রোধ করা।
‘টেক ইট ডাউন অ্যাক্ট’ (Take It Down Act) নামের এই বিলটি এখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে।
এই আইনটি সিনেটর টেড ক্রুজ (রিপাবলিকান, টেক্সাস) এবং সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচার (ডেমোক্র্যাট, মিনেসোটা) উত্থাপন করেন।
পরে সাবেক ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পও এর প্রতি সমর্থন জানান। আইনটি উভয় পক্ষের সমর্থন পেলেও এর কিছু সমালোচক আছেন।
তাদের মতে, আইনের ভাষা খুব ব্যাপক এবং এর ফলে সেন্সরশিপ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে।
নতুন এই আইনে সম্মতি ছাড়া কারো ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করা অথবা তা করার হুমকি দেওয়াকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এর মধ্যে এআই (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি ‘ডিপফেকস’ও অন্তর্ভুক্ত।
এছাড়া, ওয়েবসাইট এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোকে ভুক্তভোগীর অভিযোগ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এমন ছবি বা ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হবে।
একইসঙ্গে, প্ল্যাটফর্মগুলোকে এই ধরনের কনটেন্টের নকল বা ডুপ্লিকেট সংস্করণগুলোও অপসারণ করতে হবে।
যদিও অনেক রাজ্যে ‘রিভেঞ্জ পর্ন’ বা যৌন বিষয়ক ‘ডিপফেকস’-এর বিস্তার আগে থেকেই নিষিদ্ধ, তবে এই ‘টেক ইট ডাউন অ্যাক্ট’ ফেডারেল পর্যায়ে ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর ওপর এমন বিধিনিষেধ আরোপের বিরল দৃষ্টান্ত।
আইনটির সমর্থকেরা বলছেন, এর ফলে ভুক্তভোগীরা অনলাইনে তাদের ছবি বা ভিডিও অপসারিত করতে পারবেন এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা যাবে।
সিনেটর ক্রুজ জানিয়েছেন, স্ন্যাপচ্যাট-এর মাধ্যমে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর ‘ডিপফেক’ ছবি ছড়ানোর ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি এই আইন প্রণয়নে উৎসাহিত হন।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মালিকানা সংস্থা মেটা (Meta) এই আইনকে সমর্থন করে।
তাদের মতে, কারো ব্যক্তিগত ছবি- তা আসল হোক বা এআই-এর মাধ্যমে তৈরি করা হোক- তার অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করা হলে তা খুবই ভয়াবহ হতে পারে।
তবে, ডিজিটাল অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো এই আইনের কিছু বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তাদের মতে, আইনের ব্যাপকতা অনেক বেশি হওয়ায় বৈধ ছবি, যেমন- শিল্পের উদ্দেশ্যে ধারণ করা নগ্ন ছবি, অথবা সরকার সমালোচনামূলক ছবিও এর আওতায় সেন্সর করা হতে পারে।
তাদের আশঙ্কা, এই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সময় ভুল হতে পারে, যেখানে বৈধ কন্টেন্টও সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু প্ল্যাটফর্মগুলোকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে, তাই তাদের পক্ষে সব অভিযোগ যাচাই করা কঠিন হবে।
বিশেষ করে ছোট প্ল্যাটফর্মগুলোর পক্ষে এত দ্রুত কাজ করা সম্ভব নাও হতে পারে।
এর ফলে তারা ঝুঁকি এড়াতে অনেক ক্ষেত্রে ছবি বা ভিডিও সরিয়ে দিতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস