টাইগার সাপের পরেই সম্ভবত বাংলার মানুষের মনে সবথেকে বেশি আতঙ্ক তৈরি করে যে সরীসৃপটি, সেটি হল গোখরা সাপ। এদের বিষের তীব্রতা এতটাই বেশি যে সামান্য কামড়েই মানুষের জীবনহানি হতে পারে।
কিন্তু সম্প্রতি থাইল্যান্ডে বিরল এক ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা দেখেছেন, এই ভয়ঙ্কর গোখরা সাপগুলি নিজেদের মধ্যে লড়াই করে, তবে সেই লড়াইয়ে তারা একে অপরের ক্ষতি করে না।
বরং অনেকটা কুস্তির মতো, এক ধরনের আচার পালন করে তারা।
ভাইরজিনিয়া টেক-এর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষক ম্যাক্স জোনস এবং তাঁর সহকর্মীরা উত্তর-পশ্চিম থাইল্যান্ডে এই বিরল দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দী করেছেন।
তাঁরা ‘ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন’ নামক জার্নালে তাঁদের গবেষণা প্রকাশ করেছেন।
গবেষণায় জানা গেছে, প্রজনন ঋতুতে পুরুষ গোখরা সাপেরা সঙ্গমের অধিকারের জন্য পরস্পরের সঙ্গে এই ধরনের লড়াইয়ে লিপ্ত হয়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, লড়াইতে অংশ নেওয়া সাপগুলো প্রায় ১১ থেকে ১৩ ফুট লম্বা ছিল।
লড়াইয়ের সময় সাপগুলি একে অপরের চারপাশে পেঁচিয়ে যায় এবং তাদের ফণা মাটি থেকে উপরের দিকে তুলে ধরে।
লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার জন্য, একটি সাপ অন্যটিকে মাটিতে ফেলতে চেষ্টা করে।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই লড়াইগুলোতে সাপেরা একে অপরকে কামড়ানোর পরিবর্তে, কৌশল এবং শক্তির মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার চেষ্টা করে।
গবেষকদের মতে, এই ধরনের লড়াইয়ের মূল কারণ হল প্রজনন।
সম্ভবত স্ত্রী গোখরার কাছাকাছি আসার জন্যই পুরুষ সাপগুলির মধ্যে এই লড়াই হয়।
তবে লড়াইয়ের সময় কোনো স্ত্রী সাপকে দেখা যায়নি।
এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বন্য পরিবেশে গোখরার এই ধরনের লড়াই পর্যবেক্ষণ করা কঠিন।
কারণ এটি খুব দ্রুত ঘটে এবং সহজে নজরে আসে না।
ম্যাক্স জোনস বলেন, “গোখরা সাপ খুবই বিষধর।
তারা চাইলে সহজেই একে অপরকে মেরে ফেলতে পারে।
কিন্তু তারা তা করে না।
গবেষকরা থাইল্যান্ডের সাকারাত বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ এবং কায়েং ক্রাছান ন্যাশনাল পার্কে এই লড়াইগুলি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
তাঁদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, লড়াই সাধারণত ৩০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
লড়াই শেষে বিজয়ী সাপটি সম্ভবত কাছাকাছি থাকা স্ত্রী সাপের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পায়।
গবেষকরা আরও মনে করেন, গোখরা সাপের এই ধরনের আচরণ তাদের আবাসস্থল রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দেয়।
মানুষের ভয়ে অনেক সময় এই সাপগুলো লোকালয়ে চলে আসে।
লড়াইয়ের সময় তারা মানুষের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
তাই, গোখরার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা এবং সেগুলোকে রক্ষা করা জরুরি।
গোখরা সাপের এই বিরল লড়াইয়ের ঘটনা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
ভবিষ্যতে এই ধরনের গবেষণা সাপ এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীর জীবনযাত্রা সম্পর্কে আরও মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করবে এবং তাদের সংরক্ষণে সাহায্য করবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক