মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ: পণ্যের দাম বাড়বে, সরবরাহ শৃঙ্খলে আসবে পরিবর্তন?
বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধ নতুন মোড় নিয়েছে। সম্প্রতি, চীন থেকে আমদানি করা কিছু পণ্যের উপর যুক্তরাষ্ট্র সরকার নতুন করে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে পারে এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় দেখা দিতে পারে বড় ধরনের পরিবর্তন।
জানা গেছে, গত ৯ই এপ্রিলের পর চীন থেকে যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হচ্ছে, সেগুলোর উপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।
এর ফলে, অনেক মার্কিন ব্যবসায়ী এখন চীন থেকে পণ্য আমদানি করতে দ্বিধা বোধ করছেন। কারণ, নতুন শুল্কের কারণে পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে, যা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সমস্যা সৃষ্টি করছে।
এর সরাসরি প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের উপর, কারণ বাজারে কিছু পণ্যের সংকট দেখা দিতে পারে অথবা অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।
লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরের নির্বাহী পরিচালক জীন সেরোকা জানিয়েছেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য কমে যাওয়ায় তাদের বন্দরে পণ্য আসার পরিমাণ ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।
জাতীয় খুচরা ফেডারেশন (National Retail Federation) -এর মতে, ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি অন্তত ২০ শতাংশ কমতে পারে। জেপি মর্গান (JP Morgan) -এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, চীন থেকে আমদানি ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
এমনটা হলে, বাজারে পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেবে।
এই পরিস্থিতিতে, অনেক মার্কিন কোম্পানি চীন বাদে অন্য দেশ থেকে পণ্য আমদানির চেষ্টা করছে।
ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানির প্রবণতা বাড়ছে। কিন্তু নতুন সরবরাহকারী খুঁজে বের করা এবং তাদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক তৈরি করতে সময় লাগবে, যা তাৎক্ষণিকভাবে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে যথেষ্ট নাও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্কের কারণে ছোট ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, কারণ তাদের পক্ষে এই বাড়তি দাম বহন করা কঠিন হবে।
অনেক বড় কোম্পানির গুদামে কয়েক মাসের পণ্য মজুত থাকলেও, ছোট ব্যবসায়ীদের সেই সুযোগ নেই।
এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজের আনাগোনা কমে গেছে।
চীন থেকে পণ্য আসা কমে যাওয়ায় লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরের কর্মীরা তাদের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম কাজ করছেন।
ট্রাক চালক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদেরও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের উপরও কিছু প্রভাব পড়তে পারে।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার বাণিজ্য ঘাটতির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়লে, তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখন বিকল্প বাজার খোঁজার চেষ্টা করতে পারেন।
বর্তমানে, অনেক মার্কিন কোম্পানি চীনের পরিবর্তে অন্য দেশ থেকে পণ্য আমদানির চেষ্টা করছে।
যদি বাংলাদেশ এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে, তবে তা দেশের জন্য লাভজনক হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন