বদø/গ্লিমট: উত্তরের এক রূপকথা। উত্তর নরওয়ের একটি ছোট্ট শহর, বøডø।
এই শহরের ফুটবল ক্লাব বøডø/গ্লিমট-এর উত্থান যেন এক রূপকথা।
প্রতিকূলতা, আর্থিক সংকট আর স্থানীয় মানুষের ভালোবাসাকে সঙ্গী করে তারা জয় করেছে একের পর এক বাধা।
এই ক্লাব শুধু একটি ফুটবল দল নয়, বরং উত্তর নরওয়ের মানুষের আত্ম-মর্যাদার প্রতীক।
গ্লিমটের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। সুদূর অতীতে, এই অঞ্চলের ক্লাবগুলোকে নরওয়েজিয়ান কাপে খেলার অনুমতি পেতেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।
তাদের প্রতি ছিল এক ধরণের অনীহা, যেন তারা ছিল সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ। এমনকি, প্রচার মাধ্যমেও তাদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা হতো।
খেলোয়াড়দের উত্তর নরওয়ের আঞ্চলিক ভাষা ও সংস্কৃতির কারণে অনেক সময় বিদ্রূপের শিকার হতে হতো।
১৯৭৫ সালে বøডø/গ্লিমট এক ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে।
তারা নরওয়েজিয়ান কাপের ফাইনালে জয়লাভ করে তাক লাগিয়ে দেয়।
এরপর তারা ইউরোপিয়ান ফুটবলে নিজেদের জানান দিতে শুরু করে।
সম্প্রতি, তারা ইউরোপা লিগের সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে, যা তাদের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম, সুসংগঠিত দল এবং স্থানীয় জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন।
গ্লিমটের খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়।
প্রবীণ ফুটবলার ইয়াকব ক্লেইট-এর মতে, “এখানে সবাই একটি পরিবারের মতো।”
দলের বর্তমান খেলোয়াড়দের সাথে অতীতের খেলোয়াড়দের একটা যোগসূত্র রয়েছে।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা ক্লাবটিকে ভালোবাসেন, সমর্থন করেন।
খেলোয়াড়দের সাথে নিয়মিতভাবে কফি আড্ডায় মিলিত হন প্রবীণ সমর্থকরা, যা ক্লাব সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বøডø শহরের আবহাওয়া বেশ কঠিন।
শীতকালে এখানে বৃষ্টি আর তুষারপাতের আধিক্য থাকে।
তারপরও, এখানকার মানুষ ফুটবল ভালোবাসে।
স্টেডিয়ামের বাইরে হলুদ-কালো পতাকা ওড়ে, যা তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
স্থানীয় সমর্থক গোষ্ঠী, ‘জে-ফেল্ট’-এর সদস্যরা সব সময় দলের পাশে থাকে, গান গেয়ে আর স্লোগান দিয়ে তারা খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা যোগায়।
একটা সময় ছিল যখন ক্লাবটি প্রায় দেউলিয়া হওয়ার পথে ছিল।
কিন্তু স্থানীয় মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তারা সেই সংকট কাটিয়ে ওঠে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অর্থ সাহায্য করেন, সমর্থকরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
এমনকি, খাবার বিক্রি করেও অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল।
এই কঠিন সময়ে স্থানীয়দের সমর্থন ক্লাবটিকে বাঁচিয়ে রাখে।
বর্তমানে, বøডø/গ্লিমট একটি আধুনিক ফুটবল ক্লাবে পরিণত হয়েছে।
তারা খেলোয়াড় তৈরি এবং তাদের উন্নতির ওপর জোর দেয়।
তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়া হয় এবং তাদের বিকাশে সহায়তা করা হয়।
তাদের খেলার ধরন (“ভোর্যেস মতে” বা “আমাদের পথ”) অন্যদের থেকে আলাদা।
ক্লাবের চেয়ারম্যান ইনজে হেনিং অ্যান্ডারসন মনে করেন, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই তারা এই পর্যায়ে এসেছেন।
তাদের সাফল্যের পেছনে কোনো বাইরের বিনিয়োগ নেই, বরং নিজেদের প্রচেষ্টায় তারা সবকিছু অর্জন করেছে।
বøডø/গ্লিমট-এর এই সাফল্যের গল্প শুধু একটি ফুটবল ক্লাবের গল্প নয়।
এটি একটি সম্প্রদায়ের গল্প, যারা তাদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে লড়াই করেছে।
এটি আত্ম-প্রত্যয়ী মানুষের গল্প, যারা প্রতিকূলতাকে জয় করে নিজেদের লক্ষ্যে অবিচল থেকেছে।
ভবিষ্যতে বøডø/গ্লিমট আরও অনেক দূর যাবে, এমনটাই প্রত্যাশা।
তাদের নতুন স্টেডিয়াম তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে, যা তাদের সাফল্যের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান