ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আবহে, শান্তি আলোচনার কেন্দ্রে বন্দীদের মুক্তি: মানবাধিকার সংস্থাগুলির দাবি। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার হাতে বন্দী হওয়া সাধারণ নাগরিকদের মুক্তিকে শান্তি আলোচনার অবিচ্ছেদ্য অংশ করার আহ্বান জানাচ্ছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
তাঁদের মতে, শান্তি প্রক্রিয়াকে টেকসই করতে হলে এই মানবিক দিকটির প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমনটাই জানা গেছে।
কিয়েভ-ভিত্তিক ‘সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ’-এর প্রধান ওলেক্সান্ড্রা মাতভিইчук বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে হওয়া আলোচনার মূল বিষয় ছিল ভূখণ্ড এবং সম্ভাব্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা। তাঁর মতে, এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় মানবিক দিকটি প্রায় উপেক্ষিত হচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগের।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়ার হাতে বন্দী ইউক্রেনীয় নাগরিকদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হচ্ছে। অনেককে আটক করে রাখা হয়েছে কোনো অভিযোগ ছাড়াই।
তাঁদের আইনজীবী বা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো সুযোগ নেই। এমনকি, অনেক বন্দীর খবর পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ব্যক্তি, প্রাক্তন সেনা সদস্য এবং ইউক্রেন সরকারের কিছু কর্মচারী। এছাড়া, এমন অনেক সাধারণ নাগরিকও রয়েছেন, যাঁরা হয়তো দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভুল সময়ে ভুল জায়গায় ছিলেন।
তাঁদের উপর চালানো হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। সংস্থাগুলির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত প্রায় ১৬,০০০ মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।
তাঁদের মধ্যে কতজন রাশিয়ার হেফাজতে বন্দী, তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।
সম্প্রতি, ইউক্রেনীয় সাংবাদিক ভিক্টোরিয়া রোশিনার মৃত্যুর তদন্ত শুরু হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আটক অবস্থায় তাঁর উপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়েছিল।
এমনকি, মৃত্যুর কারণ ধামাচাপা দিতে তাঁর মস্তিষ্ক ও শরীরের কিছু অংশ সরিয়ে ফেলা হয়। ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে।
মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘ওএসসিই’-এর প্রতিনিধি জ্যান ব্রাতু বলেছেন, ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে হওয়া আচরণ আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন।
তিনি এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি দেওয়া নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন মানবাধিকার সংগঠনগুলি মনে করছে, এই বিষয়টিকে শান্তি আলোচনার কেন্দ্রে আনা উচিত।
তাঁদের মতে, বন্দী মুক্তির বিষয়টি আলোচনার প্রাথমিক পর্যায়েই নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্দীদের মুক্তি দেওয়া একটি জটিল প্রক্রিয়া। রাশিয়ার উচিত কোনো শর্ত ছাড়াই তাঁদের মুক্তি দেওয়া।
তবে, বাস্তবে এটি করা কঠিন হতে পারে।
অনেক মানবাধিকার কর্মী মনে করেন, ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষকেও রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে।
তাঁদের মতে, ইউক্রেন যদি রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা করে, তাহলে এই সমস্যার একটি সমাধান আসতে পারে।
বর্তমানে, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি করার চেষ্টা করছেন। তবে, এখনো পর্যন্ত বন্দীদের মুক্তির বিষয়টি তাঁর আলোচনায় সেভাবে আসেনি।
যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং শান্তি আলোচনার মধ্যে, বন্দীদের মুক্তি নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলির এই দাবি কতটা গুরুত্ব পায়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান