ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কাতার-এ বিলাসবহুল গলফ রিসোর্ট তৈরির চুক্তি করেছে। বুধবারের এই চুক্তির মাধ্যমে এমন একটি ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশি ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরিতে আর কোনো দ্বিধা বোধ করবেন না।
যদিও এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাঁর ব্যক্তিগত আর্থিক স্বার্থের সংঘাতের সম্ভবনা রয়েছে।
সৌদি আরবের একটি কোম্পানির মাধ্যমে নির্মিতব্য এই প্রকল্পে ট্রাম্প-ব্র্যান্ডের সমুদ্র-সংলগ্ন ভিলা এবং একটি ১৮-হোল গলফ কোর্স অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের এটিই প্রথম বিদেশি চুক্তি।
ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তিনি বিদেশি ব্যবসা থেকে নিজেকে দূরে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যাতে করে কোনো প্রকার স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি না হয়।
ওয়াশিংটনের সিটিজেনস ফর রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড এথিক্স-এর প্রধান, নোয়া বুকবাইন্ডার, কাতার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হওয়া এই চুক্তির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে, একজন প্রেসিডেন্টের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে সবার উপরে স্থান দেওয়া, নিজের ব্যক্তিগত লাভের দিকে নজর না রাখা।
এই প্রকল্পে সৌদি আরবের কোম্পানি ‘দার গ্লোবাল’-এর সঙ্গে কাতারের সরকারি মালিকানাধীন ‘কাতার দিয়ার’ নামক একটি কোম্পানিরও অংশীদারিত্ব রয়েছে। ট্রাম্প অর্গানাইজেশন দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য যে নৈতিক প্রতিজ্ঞা করেছে, তাতে বিদেশি চুক্তি করার কথা বলা হলেও, কোনো বিদেশি সরকারের সঙ্গে চুক্তি করার কথা উল্লেখ ছিল না।
এই দিক থেকে দেখলে, নতুন এই চুক্তি সেই প্রতিজ্ঞার পরিপন্থী।
যদিও ট্রাম্প অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, তাদের চুক্তিটি কাতার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নয়, বরং সৌদি আরবের কোম্পানির সঙ্গে হয়েছে। তবে, ব্যবসার দায়িত্বে থাকা ট্রাম্পের ছেলে এরিক ট্রাম্প এক বিবৃতিতে উভয় কোম্পানির নাম উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘কাতার দিয়ার এবং দার গ্লোবালের সঙ্গে এই অসাধারণ সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা কাতারে ট্রাম্প ব্র্যান্ডের প্রসার ঘটাতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত।’
জানা গেছে, বুধবারের এই চুক্তি সম্ভবত এই ধরনের শেষ চুক্তি নয়। এর আগে, ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে, গত বছর ভিয়েতনামে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত একটি কোম্পানির সঙ্গেও তাঁর গলফ রিসোর্ট নির্মাণের চুক্তি হয়েছিল।
সরকারের নীতি নির্ধারকদের নজরদারী সংস্থাগুলো এই চুক্তিগুলোর সমালোচনা করলেও, ট্রাম্পের রিপাবলিকান সহকর্মীদের মধ্যে অনেকেই এ ব্যাপারে নীরবতা পালন করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) বিষয়টি নিয়ে রিপাবলিকান দলের দুই শীর্ষ নেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও, তাঁদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সৌদি আরবের সঙ্গে কোনো চুক্তি হওয়া বিশেষভাবে উদ্বেগের কারণ। কারণ, ট্রাম্পের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর এই সম্পর্ক নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছিল।
খাশোগি ছিলেন ওয়াশিংটন পোস্টের একজন কলামিস্ট, যিনি সৌদি রাজতন্ত্রের সমালোচনা করতেন।
এছাড়াও, ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গেও সৌদি সরকারের সম্পর্ক রয়েছে। সৌদি সার্বভৌম সম্পদ তহবিল কুশনারের একটি বিনিয়োগ তহবিলে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এমনকি, সৌদি সরকার সমর্থিত ‘লিভ গলফ’ ট্রাম্পের ফ্লোরিডার ডোরল রিসোর্টে টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে।
প্রথম মেয়াদে, ট্রাম্প তাঁর ব্যক্তিগত আর্থিক স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাজ করার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এমন সব পদক্ষেপ দেখা গেছে, যা থেকে ‘পে-টু-প্লে’ চুক্তির সম্ভবনা তৈরি হয়েছে।
হোয়াইট হাউজের কাছে তাঁর হোটেলে কর্পোরেট লবিস্ট, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, কংগ্রেস সদস্য এবং কূটনীতিকদের আনাগোনা ছিল। এমনকি, তিনি একবার জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলন ডোরলে করার প্রস্তাব করেছিলেন, যদিও পরে নৈতিক উদ্বেগের কারণে তা বাতিল করতে হয়।
আগের ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘এমোলিউমেন্টস ক্লজ’-এর লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়েছিল। এই ধারায় বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট বিদেশি বা অভ্যন্তরীণ সরকার থেকে কোনো উপহার বা অর্থ গ্রহণ করতে পারবেন না।
একটি মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছিল, কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পরে তা অকার্যকর হয়ে যায়।
এবার অবশ্য হোটেলটি বিক্রি হয়ে গেছে। তবে, স্বার্থের সংঘাতের সম্ভবনা এখনো বিদ্যমান। ট্রাম্প অর্গানাইজেশন ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ নামক সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মের মূল কোম্পানিরও মালিক।
এই প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্পের পোস্টগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে, যা তাঁর আর্থিক লাভের কারণ। এছাড়া, ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম ‘ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইনান্সিয়াল’-এও ট্রাম্প পরিবারের অংশীদারিত্ব রয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস