আকাশে ওড়ার স্বপ্ন: কেন পাইলটদের জগতে নারীর সংখ্যা এত কম?
ছেলেবেলায় প্লেন ওড়ার স্বপ্ন অনেকেরই থাকে, কিন্তু সেই স্বপ্ন সত্যি করার সুযোগ পান খুব কম সংখ্যক মানুষ। আর এই সুযোগের সিংহভাগ জুড়েই থাকেন পুরুষরা।
সারা বিশ্বে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে, বিমান চালানোর পেশায় নারীদের সংখ্যা খুবই কম। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে, এই পেশায় নারীর অংশগ্রহণ এখনো খুবই নগণ্য।
যুক্তরাজ্যের উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। দেশটির বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে কর্মরত পাইলটদের মধ্যে মাত্র ৬.৫ শতাংশ নারী।
ক্যাপ্টেন পদে নারীদের সংখ্যা আরও কম। মারিয়া পেরনিয়া-ডিগিংস নামের একজন অভিজ্ঞ পাইলট, যিনি দীর্ঘদিন ধরে আকাশে উড়ছেন, জানিয়েছেন কীভাবে মাঝে মাঝে যাত্রীরা তাকে বিমান পার্কিংয়ের জন্য বাহবা দেন!
তাদের মনে এই ধারণাই প্রবল যে একজন নারী ভালো পাইলট হতে পারেন না। অনেক নারী পাইলটকে শুনতে হয়, “ওহ, আপনি একজন নারী!” তাদের মতে, এই ধরনের মন্তব্যগুলো বেশ বিব্রতকর।
শুধু যাত্রী নয়, অনেক সময় সহকর্মীদের কাছ থেকেও নারীদের প্রতি ভিন্ন আচরণ চোখে পড়ে। বিমান সংস্থাগুলোতে এখনো বেতন বৈষম্য বিদ্যমান।
অনেক সংস্থায় পুরুষ পাইলট ও প্রকৌশলীরা বেশি বেতন পান, যেখানে নারী কর্মীদের বেতন তুলনামূলকভাবে কম। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, একই কাজ করেও নারীরা পুরুষ সহকর্মীদের চেয়ে কম বেতন পান।
যুক্তরাজ্যের একটি শীর্ষস্থানীয় এয়ারলাইন্সের হিসাব অনুযায়ী, একজন পুরুষ কর্মী যেখানে এক পাউন্ড আয় করেন, সেখানে একই পদে থাকা একজন নারী পান মাত্র ৫৩ পেন্স।
এই বৈষম্যের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা কিছু বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন। তাদের মতে, সমাজে প্রচলিত কিছু ধারণা এবং সিনেমায় পাইলট ও কেবিন ক্রু’দের উপস্থাপনাও এর জন্য দায়ী।
সিনেমাতে সাধারণত পুরুষ পাইলটদের সাহসী ও দক্ষ হিসেবে দেখানো হয়, আর নারীদের দেখানো হয় যাত্রী সেবায় নিয়োজিত হিসেবে। এই ধরনের ধারণাগুলো মানুষের মনে গেঁথে যায় এবং নারীদের এই পেশায় আসার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে।
তবে, পরিস্থিতি সব জায়গায় একই রকম নয়। ভারতের উদাহরণ দিলে দেখা যায়, সেখানে ১৫ শতাংশের বেশি পাইলট নারী।
এর প্রধান কারণ হলো দেশটির আকাশ পরিবহন খাতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবস্থার পরিবর্তনে প্রয়োজন সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। নারীদের জন্য উপযুক্ত কাজের পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে তারা এই পেশায় আরও বেশি আগ্রহী হন।
একইসঙ্গে, কর্মক্ষেত্রে বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে। শুধু তাই নয়, পাইলট ট্রেনিংয়ের খরচ কমানো এবং নারীদের জন্য বিশেষ সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে।
আশা করা যায়, ভবিষ্যতে বিমান চালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে এবং আকাশ পথে ওড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে আরও বেশি সংখ্যক নারীর।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান