মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবাসন বাজারে অস্থিরতা: বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি সতর্কবার্তা এবং বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য শিক্ষা।
যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন বাজারে বর্তমানে এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই অস্থিরতার মূল কারণ হলো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য শুল্ক নীতি এবং শেয়ার বাজারের অস্থিরতা। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে দেশটির অর্থনীতিতে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
লস অ্যাঞ্জেলেসের এক রিয়েল এস্টেট এজেন্ট স্কট প্রাইস জানান, তার ক্যারিয়ারে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। সম্প্রতি, একজন ক্রেতা বন্ধের মাত্র দুই দিন আগে বাড়ি কেনার চুক্তি বাতিল করেছেন। প্রাইসের মতে, এর কারণ হলো অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ। ওই ক্রেতা তার কোম্পানির পক্ষ থেকে ছাঁটাইয়ের আশঙ্কার কথা শুনেছিলেন, তাই এই মুহূর্তে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে নিরাপদ বোধ করেননি। এমন ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে।
“রেডফিন”-এর তথ্য অনুযায়ী, ১৭ই মার্চ থেকে ১৩ই এপ্রিলের মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ শতাংশের বেশি বাড়ির চুক্তি বাতিল হয়েছে। যা ২০২০ সালের পর, অর্থাৎ কোভিড-১৯ মহামারীর শুরুর সময়ের পর, এই সময়ে সর্বোচ্চ। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি এবং আসন্ন মন্দার আশঙ্কায় অনেক সম্ভাব্য ক্রেতা তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্মাণ সামগ্রী এবং যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক আরোপের কারণে সংস্কার করা বাড়ির (fixer-upper) দাম বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া, শেয়ার বাজারের অস্থিরতা অনেক সম্ভাব্য ক্রেতার সঞ্চয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফলে, নতুন বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে প্রথমবার ক্রেতারা দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছেন।
ট্যাকোমার (ওয়াশিংটন) একজন রিয়েল এস্টেট এজেন্ট ম্যাডি মিক্সটার জানান, প্রথমবার বাড়ি কিনতে যাওয়া অনেক ক্রেতা এখন সংস্কারের প্রয়োজন হয় এমন বাড়ি এড়িয়ে চলছেন। কারণ, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা তাদের মধ্যে ভীতি তৈরি করেছে।
শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতার কারণে কিছু বয়স্ক ব্যক্তি, যারা তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন, তারা এখন আবাসনকে একটি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে দেখছেন।
অর্থনীতিবিদ এবং আর্থিক পরামর্শকরা বলছেন, যারা আগামী কয়েক বছরে বাড়ি কেনার পরিকল্পনা করছেন, তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। বিশেষ করে, শেয়ার বাজারে বেশি নির্ভর না করে, অন্যান্য খাতেও বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
আবাসন বাজারের এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি কীভাবে পরিবর্তন হচ্ছে এবং এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলো কী, তা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। কারণ, বিশ্বায়নের এই যুগে, যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত অন্য দেশগুলোর ওপর প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই, যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা এবং একইসাথে কিছু শিক্ষা নিয়ে আসতে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন