যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) চীন সরকারের কর্মকর্তাদের নিজেদের দলে ভেড়ানোর জন্য সম্প্রতি দুটি নতুন ভিডিও প্রকাশ করেছে। এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হয়েছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার সম্পর্ক ক্রমশ জটিল হচ্ছে।
এই ভিডিওগুলোতে চীনের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিদ্যমান হতাশা এবং দেশটির ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে সিআইএ সম্ভবত বেইজিং সরকারের ভেতরের খবর জানতে চাইছে।
ভিডিওগুলোতে চীনের কর্মকর্তাদের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে জর্জরিত হওয়ার ভীতি এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অর্থনৈতিক অসন্তোষের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির কট্টর নীতির কারণে অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাই এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
তাদের আশঙ্কা, যেকোনো মুহূর্তে দল থেকে বিতাড়িত হতে পারেন তারা। ভিডিওর একটি অংশে এক চীনা কর্মকর্তার উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে তিনি বলছেন, “আমি যখন দলের ভেতরে পদোন্নতি পাচ্ছিলাম, তখন দেখেছি উপরের সারির কর্মকর্তাদের একের পর এক বিদায় করে দেওয়া হচ্ছে।
এখন মনে হচ্ছে, আমার অবস্থাও তাদের মতোই হতে পারে।”
আরেকটি ভিডিওতে চীনের তরুণ প্রজন্মের হতাশার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অনেক তরুণই এখন হতাশ।
তারা বুঝতে পারছে, কঠোর পরিশ্রম করেও সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণির জীবন তাদের নাগালের বাইরে। ভিডিওতে এক তরুণ সরকারি কর্মীর অসন্তুষ্টির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
যেখানে তিনি তার অফিসের বসের বিলাসবহুল জীবন এবং নিজের কষ্টের কথা বর্ণনা করেছেন। ওই তরুণ জানায়, “ছোটবেলা থেকেই দল আমাদের শিখিয়েছে, নেতারা যে পথ দেখিয়েছেন, তা অনুসরণ করলে আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
কিন্তু এখন দেখছি, সেই উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সবার জন্য নয়, বরং কিছু মানুষের হাতে বন্দী। তাই নিজের পথ বেছে নিতে হচ্ছে।”
ভিডিও দুটির শেষে দেখা যায়, উভয় চরিত্রই সিআইএ-র ওয়েবসাইটে যোগাযোগ করছে। এর মাধ্যমে তাদের ভালো ভবিষ্যতের একটি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
সিআইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ভিডিওগুলো চীনের “গ্রেট ফায়ারওয়াল” ভেদ করতে এবং কাঙ্ক্ষিত দর্শকের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছে। এই বিষয়ে সিআইএ-র একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, “যদি এটা কাজ না করত, তাহলে আমরা আরও ভিডিও তৈরি করতাম না।
তিনি আরও যোগ করেন, চীন বর্তমানে তাদের প্রধান গোয়েন্দা অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র।
অন্যদিকে, চীনের পক্ষ থেকে এই ভিডিওগুলোর বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে, চীনের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে এই ভিডিওগুলো নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
কিছু ব্যবহারকারী ভিডিওগুলোর বিষয়বস্তুকে ‘হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেছেন। আবার অনেকে একে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবেও দেখছেন। তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের মাধ্যমে চীনকে দুর্বল করতে না পেরে, এবার ভেতরের দুর্বলতা কাজে লাগাতে চাইছে।
চীনের নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ও সম্প্রতি তাদের অনলাইন তৎপরতা বাড়িয়েছে। তারা নিয়মিতভাবে বিদেশি গুপ্তচরবৃত্তি এবং দেশের প্রতি হুমকির বিষয়ে সতর্কবার্তা প্রচার করছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার এই ‘গোয়েন্দা যুদ্ধ’ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উভয় দেশই এখন তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে, যা তাদের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষার অংশ।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা অপরিহার্য।
তথ্য সূত্র: সিএনএন