মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিগুলি সম্ভবত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে ভিন্ন ফল দিতে পারে। আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে তিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিকে আরও জোরদার করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এখন ধারণা করা হচ্ছে যে এর ফলে আমেরিকার তুলনায় ইউরোপে মূল্যস্ফীতি কমতে পারে।
বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে হলে, প্রথমে শুল্ক কী, সেটা বোঝা দরকার। শুল্ক হলো আমদানি করা পণ্যের ওপর ধার্য করা কর। কোনো দেশ যখন শুল্ক বৃদ্ধি করে, তখন সেই পণ্যের দাম বেড়ে যায়, যা সাধারণত ভোক্তাদের জন্য বেশি খরচ তৈরি করে।
ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি সম্ভবত আমেরিকার বাজারে জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেবে, কিন্তু ইউরোপের অর্থনীতিতে ভিন্ন প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর প্রধান কারণ হলো চীনের সম্ভাব্য পদক্ষেপ। চীন সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করা কমিয়ে ইউরোপের বাজারে তাদের জিনিসপত্রের সরবরাহ বাড়াতে পারে।
এর ফলে ইউরোপে পণ্যের দাম কমতে পারে, কারণ বাজারে আরও বেশি পণ্য পাওয়া যাবে এবং প্রতিযোগিতা বাড়বে। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন ল্যাগার্দে যেমনটা উল্লেখ করেছেন, চীন সম্ভবত তাদের রপ্তানি রুট পরিবর্তন করার চেষ্টা করবে।
এছাড়াও, ডলারের বিপরীতে ইউরোর মূল্য বৃদ্ধিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। যখন একটি দেশের মুদ্রা শক্তিশালী হয়, তখন আমদানি করা পণ্য সস্তা হয়।
এর ফলে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ে এবং দাম কমে আসে। গত কয়েক মাসে ডলারের তুলনায় ইউরোর দাম বেড়েছে, যা ইউরোপের জন্য একটি ইতিবাচক দিক।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে কিছুটা মন্দা আসারও সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলস্বরূপ, জ্বালানি তেলের দাম কমে যেতে পারে, যা ইউরোপের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে।
তবে, এর কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। জার্মানির মতো ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতিতে অবকাঠামো এবং প্রতিরক্ষা খাতে বিশাল বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
নমুরার অর্থনীতিবিদ জর্জ বাকি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর সীমিত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে। তবে, এর প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ইউরোপে অনেক কম হবে।
কারণ, ট্রাম্পের চরম নীতির বিপরীতে, ইউরোপ কেবল একটি দেশের আমদানির উপর শুল্ক আরোপ করবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর বিশ্লেষণেও দেখা যায়, ট্রাম্পের শুল্ক আমেরিকার বাজারে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেবে। এ পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় নীতিনির্ধারকদের জন্য সুদের হার কমানোর সুযোগ তৈরি হতে পারে, যদি তাদের অর্থনীতির সহায়তার প্রয়োজন হয়।
যদিও এই বাণিজ্য যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখনো সেভাবে দৃশ্যমান নয়, তবে বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনগুলো আমাদের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল খাতগুলোতে এর প্রভাব পড়তে পারে। আমদানি পণ্যের দাম এবং মুদ্রা বিনিময় হারে পরিবর্তন আসতে পারে, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বাণিজ্য নীতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের দিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: CNN