ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগো শহরে যেন এক অন্যরকম আনন্দের ঢেউ। এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি আর প্রকৃতির মাঝে মিশে আছে এক অদম্য খুশির ছোঁয়া। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এর আলোকচিত্রী কিলি ইয়ুয়ান সম্প্রতি এই শহর ঘুরে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা ক্যামেরাবন্দী করেছেন।
তার মতে, সান দিয়েগোর বাসিন্দাদের মধ্যে যে স্বাভাবিক আনন্দ ও ইতিবাচকতা দেখা যায়, তা সত্যিই বিরল।
বালবোয়া পার্কে গিটার বাজানো এক ব্যক্তির হাসি থেকে শুরু করে ল্যা ইয়োলা কোভের সমুদ্রের তীরে শিশুদের দৌড়ঝাঁপ—সবখানেই যেন একসঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোর উদযাপন। ইয়ুয়ানের মতে, এই শহরের বাসিন্দাদের মধ্যেকার পারস্পরিক সম্পর্ক এবং প্রকৃতির সঙ্গে তাদের নিবিড় যোগ এই আনন্দের মূল চাবিকাঠি।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এক্সপ্লোরার অ্যালবার্ট লিন-এর সঙ্গে কথা বলে ইয়ুয়ান জানতে পারেন, সান দিয়েগোর সংস্কৃতি বহু পুরোনো ঐতিহ্যের ধারক। এখানে প্রায় ৭ লক্ষ অভিবাসী বাস করে, যা শহরটিকে করেছে বহুজাতিক সংস্কৃতির মিলনভূমি। এখানকার সান দিয়েগো ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়ামে গেলে দেখা যায়, কীভাবে এখানকার আদিবাসী কুমিয়া জাতির মানুষ ১২,০০০ বছর ধরে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে বসবাস করছে।
মিশন ট্রেইলস রিজিয়নাল পার্কে কুমিয়া কমিউনিটি কলেজের ডিরেক্টর ড. স্ট্যানলি রড্রিগেজ দেখিয়েছেন, কীভাবে এই অঞ্চলের আদিবাসীরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাদের ঐতিহ্য ও প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
এখানকার সবুজ স্থানগুলোতে স্থানীয়রা হাইকিং এবং বাইকিংয়ের মতো বিভিন্ন বিনোদনমূলক কার্যকলাপে অংশ নেয়, যা তাদের জীবনযাত্রাকে আরও আনন্দময় করে তোলে।
টুনা হারবার ডকসাইড মার্কেটে ইয়ুয়ানের সঙ্গে দেখা হয় স্থানীয় শেফ তারা মনসোদের। টাটকা সামুদ্রিক খাবার নিয়ে জেলেদের সঙ্গে তার কথোপকথন, স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ভালো মানের উপকরণ সংগ্রহ—এসবই তার রান্নার সাফল্যের মূল ভিত্তি।
তিনি জানান, এখানকার মানুষের পারস্পরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক তাকে আনন্দিত করে।
এছাড়াও, পরিবেশবিদ এবং প্রাক্তন সার্ফার রব ম্যাকাডোর সঙ্গে ইয়ুয়ানের সাক্ষাৎ হয়। ম্যাকাডোর দুটি ফাউন্ডেশন—’দ্য রব ম্যাকাডো ফাউন্ডেশন’ এবং ‘চ্যালেঞ্জড অ্যাথলেটস ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী তরুণদের সার্ফিংয়ের আনন্দ উপভোগ করতে সাহায্য করেন।
ইয়ুয়ান বলেন, ম্যাকাডোর হাসিখুশি মুখ এবং অন্যদের প্রতি তার ভালোবাসাই যেন সান দিয়েগোর সংস্কৃতির মূল প্রতিচ্ছবি।
সবুজ পার্ক, সমুদ্রের তীর অথবা রান্নাঘর—সান দিয়েগোর মানুষ যেন তাদের আনন্দকে উপভোগ করতে জানে।
এই শহরের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা, প্রকৃতির প্রতি তাদের ভালোবাসা এবং সবার প্রতি তাদের আন্তরিকতাই এটিকে একটি বিশেষ স্থান করে তুলেছে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক