প্রাণঘাতী কিডনি রোগের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত, শূকর থেকে মানবদেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপন!
বিশ্বজুড়ে কিডনি রোগের সমস্যা বাড়ছে, আর এই সমস্যার সমাধানে এক নতুন আশা জাগিয়েছে বিজ্ঞান। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা শূকর থেকে মানুষের শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন। এই সাফল্যের ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সংকট কিছুটা হলেও কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বায়োটেক কোম্পানি eGenesis, এই গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তারা জেনেটিক পরিবর্তনের মাধ্যমে শূকরের অঙ্গকে মানুষের শরীরের জন্য উপযোগী করে তুলেছে। বিশেষ করে, শূকরের শরীরে এমন কিছু উপাদান থাকে যা মানবদেহে প্রত্যাখ্যানের কারণ হতে পারে। বিজ্ঞানীরা CRISPR-Cas9 প্রযুক্তি ব্যবহার করে শূকরের জিন পরিবর্তন করেছেন এবং এই সমস্যা দূর করেছেন।
এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ড. বিজর্ন পিটারসেন। তিনি জানান, তারা প্রথমে বানরের শরীরে এই পরীক্ষা চালান এবং সেখানে সফল হন। এরপর, তারা মানুষের শরীরে এই পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
এই সাফল্যের একটি বড় উদাহরণ হলেন রিক স্লেম্যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে ভুগছিলেন এবং ডায়ালাইসিস এর উপর নির্ভরশীল ছিলেন। অবশেষে, তিনি eGenesis-এর তৈরি করা একটি শূকরের কিডনি পান। গত বছরের মার্চ মাসে বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের পর প্রথমদিকে তিনি ভালোই ছিলেন, কিন্তু অস্ত্রোপচারের দুই মাস পরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
তবে, এই ঘটনা সত্ত্বেও বিজ্ঞানীরা হতাশ হননি। তারা বলছেন, স্লেম্যানের শরীরে প্রতিস্থাপিত কিডনিটি ভালোভাবে কাজ করছিল এবং তার মৃত্যুর কারণ ছিল হৃদরোগ। এই ধরনের অস্ত্রোপচার এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদে এর ফলাফল কেমন হবে, তা জানতে আরও অনেক গবেষণা প্রয়োজন।
এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় টিম অ্যান্ড্রুজ নামের ৬৭ বছর বয়সী একজন ব্যক্তিও সম্প্রতি শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করিয়েছেন। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। তিনি এখন অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রযুক্তি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে, এটি সফল হলে কিডনি প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা হাজারো রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে। আমাদের দেশেও প্রতি বছর অনেক মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হন এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অভাবে তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। তাই, এই ধরনের গবেষণা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, এই বিষয়ে কিছু নৈতিক এবং সামাজিক প্রশ্নও রয়েছে। যেমন, প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে অঙ্গ প্রতিস্থাপন কতটা নিরাপদ? মানুষের শরীরে শূকরের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করলে কোনো নতুন রোগের সৃষ্টি হবে কিনা, সে বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন। এছাড়াও, এই চিকিৎসা পদ্ধতি সবার জন্য সহজলভ্য করাটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই প্রযুক্তি এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে, এটি নিঃসন্দেহে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক