বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে এক সময়ের প্রভাবশালী কোম্পানি টেসলার আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, তাদের মুনাফা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
একই সঙ্গে কমেছে শেয়ারের দামও। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা বাড়লেও, বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে টেসলার এই অবস্থা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, টেসলার প্রধান সমস্যা হলো তাদের মুনাফা কমে যাওয়া। প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটি মাত্র ৪ কোটি ৯ মিলিয়ন ডলার মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে, যেখানে তাদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল গাড়ি বিক্রি।
তবে এই মুনাফার একটি বড় অংশ এসেছে অন্যান্য গাড়ি প্রস্তুতকারকদের কাছে পরিবেশ-সংক্রান্ত ছাড়পত্র (regulatory credits) বিক্রি করে। ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য কিছু নীতির কারণে ভবিষ্যতে এই ছাড়পত্র বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে, যা টেসলার জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেসলার এই খারাপ অবস্থার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। একদিকে যেমন চীনের বাজারে তাদের গাড়ির বিক্রি কমেছে, তেমনই ইউরোপেও তারা পিছিয়ে পড়ছে।
বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রস্তুতকারক হওয়ার দৌড়ে তারা চীনা কোম্পানি বিওয়াইডির (BYD) কাছে পিছিয়ে পড়তে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্কের বিতর্কিত কিছু রাজনৈতিক মন্তব্য ও কর্মকাণ্ডের কারণেও অনেকে তাদের ব্র্যান্ডের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন। এমনকি ওয়াল স্ট্রিটের কিছু বিনিয়োগকারীও মনে করছেন, মাস্কের বিতর্কিত পদক্ষেপের কারণে কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে।
তবে, মাস্ক এখনও পর্যন্ত কোম্পানির খারাপ পরিস্থিতিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, কোম্পানি কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।
যদিও বিশ্লেষকরা মনে করেন, এখনই সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যায় পড়তে পারে টেসলা।
টেসলার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ‘রোবট্যাক্সি’ (robotaxi) এবং হিউম্যানয়েড রোবট তৈরি করা। মাস্কের দাবি, এই দুটি প্রকল্প সফল হলে টেসলার বাজার মূল্য অনেক বেড়ে যাবে।
কিন্তু অন্যান্য গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর স্ব-চালিত গাড়ির (self-driving car) প্রযুক্তি তৈরিতে ধীরগতির কারণে এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
মোটকথা, টেসলার জন্য সামনের দিনগুলো সহজ হবে না। বাজারের তীব্র প্রতিযোগিতা, আর্থিক চাপ এবং নেতৃত্বের বিতর্ক—সবকিছু মিলিয়ে তাদের টিকে থাকার লড়াই কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, কোম্পানিটি কীভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন