যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন শান্তি আলোচনায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য কিছু পদক্ষেপ রাশিয়ার অনুকূলে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ।
আলোচনা এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি, তবে বিভিন্ন পক্ষ থেকে আসা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তুলেছে।
আলোচনাগুলো কখনো হয়েছে ক্রেমলিনের সুসজ্জিত কক্ষে, আবার কখনও সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার মার্বেল পাথরের ওপর। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসেও এমন আলোচনা হয়েছে, যেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের একটি বিতর্কিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ট্রাম্প ইউক্রেনকে ভূখণ্ড ছাড়তে এবং ন্যাটো জোটে যোগ না দিতে বলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এমনকি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করারও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যা কয়েক মাস আগেও ছিল কল্পনাতীত।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য, বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে করা পোস্টে, এমন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত তাকে ভুল পথে চালিত করছেন। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত প্রস্তাব আলোর মুখ দেখেনি।
আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক পুনরায় স্থাপিত হয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে শীতল ছিল। রাশিয়ার সরকারি গণমাধ্যম এই আলোচনাকে দুই পরাশক্তির মধ্যে সম্পর্কের বৃহত্তর এজেন্ডার অংশ হিসেবে তুলে ধরেছে।
তাদের ভাষ্যমতে, ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ইউক্রেন ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য, কৌশলগত অস্ত্রের বিস্তার রোধ এবং এমনকি দুই দেশের মধ্যে হকি খেলার আয়োজন নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমে রাশিয়া ইতোমধ্যে একটি সুবিধা আদায় করেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।
ট্রাম্পের এমন অবস্থান রাশিয়ার জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে, আলোচনা এখনো পর্যন্ত শুধু কথার পর্যায়েই সীমাবদ্ধ। শান্তি আলোচনার শর্ত নিয়ে এখনো অনেক মতপার্থক্য বিদ্যমান।
ইউক্রেন কোনো ভূখণ্ড ছাড়তে রাজি নয় এবং ভবিষ্যতে আগ্রাসন থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইছে। অন্যদিকে, রাশিয়া তাদের দখলকৃত অঞ্চলগুলো ধরে রাখতে চায় এবং ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিরোধিতা করছে।
তারা ইউক্রেনকে সামরিক শক্তি কমানোরও দাবি জানাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউক্রেনের জন্য শক্তিশালী সামরিক বাহিনী থাকাটা জরুরি, বিশেষ করে আত্মরক্ষার স্বার্থে। তাই অস্ত্র সরবরাহ এবং সেনাবাহিনীর আকার সীমিত করার যেকোনো প্রস্তাব তাদের জন্য কঠিন হতে পারে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সম্প্রতি বলেছেন, ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার যুক্ত করা অঞ্চলগুলোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি শান্তি আলোচনার জন্য অপরিহার্য।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। কোনো কারণে যদি যুক্তরাষ্ট্র এই শান্তি আলোচনা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়, তাহলে ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর নির্ভর করতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র যদি শান্তি প্রচেষ্টা থেকে সরে আসে এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে, তবে তা পুতিনের জন্য বড় ধরনের সাফল্য বয়ে আনবে। তবে বর্তমানে কংগ্রেসের কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকায় ট্রাম্পের জন্য কাজটি কঠিন হতে পারে।
সবমিলিয়ে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা এখনো একটি জটিল পর্যায়ে রয়েছে। বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য পদক্ষেপের ওপর এর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস