পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণের পর ক্যাথলিক চার্চের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন কার্ডিনালরা। আসন্ন কনক্লেভে (Conclave) নতুন পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
তবে নতুন পোপ নির্বাচনের আগে বিতর্ক দানা বেঁধেছে, কারণ অনেকে প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের সংস্কারগুলো এগিয়ে নিতে চাইছেন, আবার কেউ কেউ ভিন্ন পথে হাঁটতে আগ্রহী।
পোপ ফ্রান্সিস তার ১২ বছরের শাসনামলে ক্যাথলিক চার্চে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছিলেন। তিনি দরিদ্রদের প্রতি মনোযোগ বাড়িয়েছিলেন এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
নারীদের ভূমিকা, এলজিবিটি সম্প্রদায়ের প্রতি সহানুভূতি এবং বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে তার উদার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়েও তিনি সোচ্চার ছিলেন।
কিন্তু পোপ ফ্রান্সিসের সংস্কারের বিরোধিতা করে আসছিলেন রক্ষণশীল ক্যাথলিকদের একটি অংশ। তাদের মতে, সংস্কারগুলো চার্চের ঐতিহ্য ও আদর্শের পরিপন্থী।
নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়া ১৩৩ জন কার্ডিনালের সামনে এখন গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন: প্রয়াত পোপের সংস্কারগুলো অব্যাহত রাখা হবে, নাকি পুরনো পথে ফিরে যাওয়া হবে?
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, অনেক কার্ডিনাল চান, নতুন পোপ যেন ঐক্যের ওপর জোর দেন এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখেন। তাদের মতে, এমন একজন পোপ নির্বাচিত হলে তা চার্চের জন্য ‘মৃত্যুঘণ্টা’ বাজানোর মতো হবে।
অন্যদিকে, পোপ ফ্রান্সিসের অনুসারীরা মনে করেন, তার সংস্কারগুলো এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম এমন একজন পোপ প্রয়োজন।
নতুন পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া অত্যন্ত গোপনীয়। কার্ডিনালরা তাদের ব্যক্তিগত মতামত বিবেচনা করে ঈশ্বরের ইচ্ছানুযায়ী ভোট দেবেন।
নির্বাচনের আগে কার্ডিনালরা নিয়মিত আলোচনায় বসছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত বিনিময় করছেন। এরই মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
কেউ চান, নতুন পোপ যেন পোপ ফ্রান্সিসের দেখানো পথ অনুসরণ করেন এবং চার্চের ‘বৈচিত্র্য’-এর ওপর জোর দেন। তাদের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী এই বৈচিত্র্যকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
অন্যদিকে, ‘ঐক্য’-এর পক্ষের কার্ডিনালরা চান, চার্চ আরও স্থিতিশীল হোক। তাদের মতে, পোপ ফ্রান্সিসের সময়ে কিছু বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে, যা নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার।
এই দলের মধ্যে প্রয়াত পোপের কট্টর সমালোচকদেরও দেখা যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, ফ্রান্সিস একনায়কতান্ত্রিক কায়দায় চার্চ পরিচালনা করেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, কার্ডিনালদের মধ্যে বিভাজন সুস্পষ্ট। কেউ চান, নতুন পোপ যেন ঐতিহ্যবাহী পথে ফিরে যান এবং ঐক্যের বার্তা দেন।
আবার কেউ চান, সংস্কারের ধারা অব্যাহত থাকুক। এই প্রেক্ষাপটে নতুন পোপ নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হতে যাচ্ছে, যা ক্যাথলিক চার্চের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন