পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং বন্ধুত্বের একটি নতুন দিগন্ত : ‘পুরুষদের সার্কেল’
বর্তমান সমাজে পুরুষদের মধ্যে একাকীত্ব বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে মানসিক চাপ। পশ্চিমা বিশ্বে ‘পুরুষদের সার্কেল’ নামের একটি নতুন ধারণা জনপ্রিয়তা লাভ করছে, যা পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং গভীর সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে।
এই ধরনের আলোচনা চক্রগুলো পুরুষদের নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করতে, নিজেদের দুর্বলতাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে উৎসাহিত করে।
পুরুষদের সার্কেল মূলত এমন একটি স্থান, যেখানে পুরুষরা একত্রিত হয়ে তাদের জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।
সাধারণত, এখানে একটি নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করা হয়। শুরুতে, আলোচনার নিয়ম তৈরি করা হয়। এরপর, অংশগ্রহণকারীরা একে অপরের সাথে পরিচিত হন এবং তাদের বর্তমান মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জানান।
আলোচনার বিষয়গুলি সম্পর্কের সমস্যা, কর্মজীবনের চ্যালেঞ্জ অথবা স্বাস্থ্য বিষয়ক সংকট পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। এই ধরনের আলোচনায় একে অপরের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা হয় এবং প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
আলোচনার শেষে, সবাই তাদের উপলব্ধির কথা জানান এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ‘মেন’স সার্কেল’ নামক একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, প্যাস্কো অ্যাশটন মনে করেন, পুরুষদের সামাজিক এবং মানসিক ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলোর অভাব রয়েছে।
এই কারণে, তিনি পুরুষদের জন্য বিশেষ আলোচনা চক্র তৈরি করেছেন। এই ধরনের সার্কেলে অংশ নেওয়া পুরুষরা পারস্পরিক সমর্থন, জীবনের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, মানসিক নিয়ন্ত্রণের উন্নতি এবং আত্ম-সচেতনতা সহ বিভিন্ন বিষয়ে উপকৃত হন।
পুরুষদের গভীর সম্পর্ক তৈরি করতে না পারার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা সংস্কৃতির সমস্যাকে দায়ী করেন।
পশ্চিমা সমাজে পুরুষদের “পুরুষত্ব” সম্পর্কে কিছু প্রচলিত ধারণা রয়েছে, যা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে বাধা দেয়।
দীর্ঘদিন ধরে, পুরুষদের “পুরুষের মতো আচরণ করতে” শেখানো হয়, যার ফলে তারা নিজেদের অনুভূতি চেপে রাখতে বাধ্য হয়।
এর ফলস্বরূপ, অনেক পুরুষ বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে গভীরতা তৈরি করতে পারে না।
তবে, এই ধরনের সার্কেল সব সময় পারফেক্ট নয়।
কিছু ক্ষেত্রে, এই আলোচনা চক্রগুলো পুরুষের ঐতিহ্যবাহী ধারণাকে আরও শক্তিশালী করে।
মনোবিজ্ঞানী অ্যাঞ্জেলিকা ফেরারার মতে, সেরা সার্কেলগুলো পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কঠোর নিয়ম এবং পুরুষত্বের প্রচলিত ধারণাকে সরাসরি চিহ্নিত করে এবং সেগুলোর সমালোচনা করে।
পুরুষদের সার্কেলগুলি সাধারণত মধ্যবয়সী পুরুষদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়।
তবে, এই ধারণাটি তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া একটি চ্যালেঞ্জ।
অনেক তরুণ পুরুষ সামাজিক মাধ্যমে প্রভাবশালী “পুরুষত্ব” বিষয়ক ব্যক্তিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়, যারা কঠোর শরীরচর্চা এবং খাদ্যাভ্যাস সহায়ক পদ্ধতির প্রচার করে।
তাদের কাছে, সার্কেলে বসে অনুভূতি নিয়ে আলোচনা করা হয়তো খুব একটা আকর্ষণীয় নয়।
পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সম্পর্কের উন্নতির জন্য এই ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।
এটি পুরুষদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতা বাড়াতে এবং সমাজের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে সহায়তা করে।
তথ্য সূত্র: CNN