ওয়ারেন বাফেটের বিদায়: বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের নতুন দিগন্ত।
বিশ্বের অন্যতম সফল বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট, যিনি ‘ওমাহা’র ঐশ্বরিক’ নামেও পরিচিত, এই বছর শেষে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। ৯৪ বছর বয়সী বাফেট দীর্ঘদিন ধরে তার বিনিয়োগের নিজস্ব ধারার জন্য পরিচিত।
তিনি তার বিনিয়োগের দর্শন এবং ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের কাছে সুপরিচিত। বাফেটের এই পদত্যাগের ফলে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে।
বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের পরবর্তী সিইও হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন গ্রেগ অ্যাবেল। বর্তমানে তিনি বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে এনার্জির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। বাফেট তার উত্তরসূরি হিসেবে অ্যাবেলকে বেছে নিয়েছেন, যিনি কোম্পানির পরিচালকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় এবং সম্মানিত।
ওয়ারেন বাফেট তার বিনিয়োগের নিজস্ব ধারার জন্য সুপরিচিত। তিনি সবসময় ভালো মানের, কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম মূল্যের কোম্পানি খুঁজে বের করতেন। এরপর তিনি সেই কোম্পানিগুলোতে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতেন এবং লাভের জন্য অপেক্ষা করতেন।
এই কৌশল তাকে বিপুল পরিমাণ সম্পদ তৈরি করতে সাহায্য করেছে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসাব অনুযায়ী, বাফেটের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৮ লক্ষ কোটি টাকার সমান, যা ২০২৩ সালের ১০ই মে-র বিনিময় হার অনুযায়ী)।
বাফেটের বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার মিটিং একটি বিশেষ আকর্ষণ। এই মিটিংয়ে কোম্পানির বিভিন্ন পণ্য প্রদর্শিত হয় এবং বাফেট নিজে সেখানে উপস্থিত থাকেন। এই অনুষ্ঠানটি ‘পুঁজিবাদী বিশ্বের উডস্টক’ হিসেবেও পরিচিত। যেখানে হাজার হাজার শেয়ারহোল্ডার এবং ভক্তদের সমাগম হয়।
এখানে বাফেট এবং তাঁর দীর্ঘদিনের সহযোগী চার্লি মুঙ্গারের (যিনি ২০২৩ সালের শেষের দিকে মারা গেছেন) প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
বাফেটের বিনিয়োগ কৌশল সবসময় সরল ছিল: তিনি যে বিষয়ে ভালোভাবে জানেন না, সেই ব্যবসায় তিনি অর্থ লগ্নি করতেন না। বাফেট সব সময় ভালো কোম্পানি খুঁজে বের করতেন এবং সেগুলোকে দীর্ঘ সময় ধরে ধরে রাখতেন।
এই কৌশলের মাধ্যমে তিনি কয়েক দশক ধরে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করেছেন। বাফেটের এই বিদায় নিশ্চিতভাবেই বিনিয়োগের জগতে একটি বড় পরিবর্তন আনবে।
তবে, বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে আগের মতো নেই। বাফেট নিজেই বলেছেন, কোম্পানির আকার বড় হওয়ার কারণে আগের মতো দ্রুত হারে মুনাফা করা এখন কঠিন। এছাড়া, বিশ্ব অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও পরিবর্তন এসেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতির চিত্র বদলে দিয়েছে। এমতাবস্থায়, গ্রেগ অ্যাবেলের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক বাফেটের এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলেছেন, “ওয়ারেনের মতো আর কেউ নেই। বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের ভবিষ্যৎ গ্রেগের হাতে নিরাপদ।
তথ্যসূত্র: সিএনএন