বিরল মৃত্তিকা সংকট: বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন উদ্বেগের ছায়া
বিশ্বজুড়ে শিল্প উৎপাদন এবং প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে কিছু বিশেষ উপাদানের চাহিদা। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো বিরল মৃত্তিকা (Rare Earth Elements)। চীন এই বিরল মৃত্তিকা উৎপাদনে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করেছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংকট ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ের মতো বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
এই বিরল মৃত্তিকা মূলত ১৭টি ধাতব উপাদানের সমষ্টি। আধুনিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ যেমন স্মার্টফোন, ফ্ল্যাট স্ক্রিন টিভি, গাড়ির ইঞ্জিন থেকে শুরু করে এমআরআই (MRI) মেশিন ও কিছু ক্যান্সার-এর ঔষধ তৈরিতেও এর ব্যবহার অপরিহার্য।
চীনের বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক।
বর্তমানে, চীন এই বিরল মৃত্তিকাগুলির রপ্তানির ওপর নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এপ্রিল মাস থেকে কার্যকর হওয়া এই লাইসেন্সিং ব্যবস্থার কারণে বিশ্বের অনেক দেশে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর সরবরাহ কমে গেছে। এর ফলে, বিভিন্ন শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রতিনিধি দল লন্ডনে মিলিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিরল মৃত্তিকা সংকট এই আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের একজন মুখপাত্র জানান, দু’দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর হাতে এখন মাত্র দুই থেকে তিন মাসের মতো বিরল মৃত্তিকা মজুত আছে।
যদি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হয়, তবে শিল্প উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর ফলস্বরূপ, গাড়ির যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিরল মৃত্তিকার অভাবে গাড়ির উৎপাদনও ব্যাহত হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ফোর্ড (Ford) কোম্পানি এরই মধ্যে তাদের একটি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
বিরল মৃত্তিকার বিকল্প হিসেবে অন্যান্য চুম্বক এবং মোটর তৈরির চেষ্টা চলছে, তবে সেগুলি এখনো পর্যন্ত খুব বেশি কার্যকর নয়।
এই পরিস্থিতিতে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি জরুরি, যা বিরল মৃত্তিকার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশগুলো এখন তাদের নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা করছে।
তবে এতে বেশ কয়েক মাস বা বছর লেগে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরো আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল। কারণ, বিরল মৃত্তিকার অভাব শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা।
এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতির ওপরও পড়তে পারে।
তাই, সংকট মোকাবেলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন