ফিলিস্তিনিদের ‘নাকবা’, ৭7 বছর পরও শোকের স্মৃতি
আজ ১৫ই মে। ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য একটি শোকের দিন।
দিনটি ‘নাকবা’ বা ‘বিপর্যয়’ দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিনে, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় বাস্তুচ্যুত হওয়া ফিলিস্তিনিদের স্মরণ করা হয়। ফিলিস্তিনের মানুষ তাদের ভূমি থেকে বিতাড়িত হওয়ার এই ঘটনার ৭7 বছর পূর্ণ করলো।
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে অবস্থিত রামাল্লা শহরে এই উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সেখানে ফিলিস্তিনি পতাকা এবং ‘ফিরে আসা’ লেখা কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা র্যালি ও আলোচনা সভায় অংশ নেয়।
অনেক শিশু তাদের হারানো বাড়িঘরের প্রতীক হিসেবে বিশাল আকারের চাবি হাতে নিয়ে আসে, যা তাদের নিজেদের ভূমিতে ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।
অন্যদিকে, গাজায় পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত ১৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি বোমা হামলায় গাজার বাসিন্দারা চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এখানকার যুদ্ধ ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণে গাজার সাধারণ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
এখানকার জীবন যেন এক দীর্ঘ ‘নাকবা’-র নামান্তর। খান ইউনিসের বাসিন্দা মোয়মেন আল-শেরবিনি জানিয়েছেন, গাজায় তারা প্রতিনিয়ত প্রিয়জনদের হারাচ্ছেন, তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং জীবন ধারণের সমস্ত উপায় কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
১৯৪৮ সালে প্রায় ৭ লক্ষ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনিকে তাদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। তাদের অনেকেই শরণার্থী হিসেবে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
বর্তমানে গাজার প্রায় ২৪ লক্ষ মানুষের মধ্যে প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি গাজার জনসংখ্যা সরিয়ে নেওয়ার জন্য তৃতীয় কোনো দেশ খুঁজে বের করার কথা বলেছেন।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের প্রধান দাবি হলো, তারা তাদের আদি বাসভূমে ফিরতে চায়। তাদের এই ‘ফিরে আসার অধিকার’-এর বিষয়টি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
তবে, দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
ফিলিস্তিনিরা মনে করেন, নাকবা দিবস কেবল একটি স্মৃতি নয়, বরং এটি তাদের বর্তমান জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গাজার মানুষের জন্য এটি একটি দৈনিক বাস্তবতা, যেখানে তারা প্রতিনিয়ত কষ্টের মধ্যে দিন কাটায়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা