আদিম মানব প্রজাতি, যাদেরকে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষ হিসেবে জানি, তাদের হাত ব্যবহারের ধরন নিয়ে নতুন একটি গবেষণা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রায় ২০ লক্ষ বছর আগেকার অস্ট্রালোপিথেকাস সেদিবা এবং ৩ লক্ষ বছর আগের হোমো নালিদি প্রজাতির মানুষেরা তাদের হাত ব্যবহার করত গাছে ওঠা এবং হাতিয়ার তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে।
সম্প্রতি ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় জানা যায়, মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসে হাতের গঠন এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরলরৈখিক কোনো পরিবর্তন হয়নি, বরং এটি ছিল জটিল এবং বহুমুখী।
গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া জীবাশ্ম থেকে সংগৃহীত হাতের আঙুলের হাড়ের ঘনত্ব থ্রিডি স্ক্যানিং প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেন। তারা দেখেছেন, এই দুই প্রজাতির মানুষের আঙুলের হাড়ের গঠন এমন ছিল যা একইসঙ্গে গাছ বেয়ে ওঠা এবং কোনো বস্তু ধরা ও নাড়াচাড়ার কাজে সহায়তা করত।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এর মাধ্যমে তারা কী বুঝাতে চেয়েছেন? এর উত্তর হলো, এই দুই প্রজাতি তাদের হাত ব্যবহার করত, একদিকে যেমন গাছে চড়ার জন্য, তেমনি অন্যদিকে হাতিয়ার বা অন্য কোনো জিনিস তৈরি করার জন্য।
গবেষণাটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন একজন, আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্টোরির জীবাশ্মবিদ সামার সায়েদা। তিনি বলেন, “তাদের হাতের গঠন প্রমাণ করে, তারা হয়তো দ্বিপদী হয়ে হেঁটে যেত এবং একইসাথে তাদের হাত ব্যবহার করত বিভিন্ন জিনিস ও হাতিয়ার নাড়াচাড়ার জন্য, এমনকি গাছ বা পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকার মতো কাজেও।”
এই গবেষণার ফলাফল মানুষের বিবর্তন বিষয়ক ধারণাকে নতুন দিকে চালিত করে। স্মিথসোনিয়ান-এর জীবাশ্মবিদ রিক পটস, যিনি এই গবেষণায় সরাসরি জড়িত ছিলেন না, তিনি বলেছেন, “আদিম মানব প্রজাতিদের হাতের গঠন প্রমাণ করে যে, বানরের মতো বৈশিষ্ট্য থেকে ধীরে ধীরে মানুষের মতো হাত তৈরি হয়নি।”
হাতের জীবাশ্ম পাওয়া কঠিন হলেও, এই গবেষণায় ব্যবহৃত নমুনাগুলো আঙুলের উপর বিভিন্ন চাপের ধারণা দেয়, যা থেকে তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে নতুন তথ্য পাওয়া যায়। চ্যাথাম ইউনিভার্সিটির জীবাশ্মবিদ এরিন মারি উইলিয়ামস-হাটলার মতে, “হাত আমাদের চারপাশের জগৎকে অনুভব করার অন্যতম প্রধান উপায়।”
এই গবেষণা, মানুষের বিবর্তন এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা দেয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস