শিকাগোর এক শ্রমিক অধ্যুষিত শহরতলিতে বেড়ে ওঠা রবার্ট ফ্রান্সিস প্রিভোস্ট, যিনি সম্প্রতি পোপ লিও চতুর্দশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত হয়েছেন। তার জীবনের গল্প যেন এক সাধারণ বালক থেকে বিশ্ব ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের প্রধান হওয়ার এক অসাধারণ যাত্রা।
এই যাত্রাপথে তিনি কিভাবে বেড়ে উঠেছেন, তার পরিবার, চার্চ এবং স্থানীয় পরিবেশ কিভাবে তাকে প্রভাবিত করেছে, তা নিয়েই আজকের আলোচনা।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর শিকাগো। এই শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত ডল্টন নামের একটি এলাকায় প্রিভোস্ট পরিবারের বাস ছিল।
সেখানের সেন্ট মেরি অফ দ্য এ্যাজাম্পশন প্যারিশ ছিলো তাদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। এই প্যারিশে নিয়মিত প্রার্থনা করতে যেতেন রবার্ট ফ্রান্সিস এবং তার পরিবার।
তার বেড়ে ওঠার পরিবেশ ছিল বহু সংস্কৃতির মিশ্রণে গঠিত, যেখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস ছিল। এই পরিবেশে বেড়ে ওঠা রবার্ট-এর মধ্যে অন্যদের প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসার জন্ম হয়।
রবার্ট ফ্রান্সিসের বাবা লুই প্রিভোস্ট ছিলেন ফরাসি ও ইতালীয় বংশোদ্ভূত, আর মা, মিলড্রেড মার্তিনেজ প্রিভোস্ট ছিলেন স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত।
মিলড্রেড ছিলেন একজন শিক্ষক এবং স্থানীয় চার্চের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি চার্চের অর্গান বাজাতেন এবং কোয়ারে তার কণ্ঠের মাধ্যমে অবদান রাখতেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তাদের মায়ের পরিবার ছিলো নিউ অরলিন্সের বাসিন্দা।
ছোটবেলায় রবার্ট ফ্রান্সিসকে প্রায়ই দেখা যেত তার বাড়ির বেসমেন্টে বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করতে। বন্ধুদের তিনি পুরোহিত সাজিয়ে খ্রিস্টান ধর্মমতে উপাসনা করতেন এবং খেলার ছলে তাদের মাঝে “ওয়েফার” নামক খাবার বিতরণ করতেন।
প্রতিবেশী ও বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো তখন কল্পনাও করতে পারেনি, এই ছেলেটিই একদিন বিশ্ব ক্যাথলিকদের নেতা হবেন।
ডলটনের বাইরে, রবার্ট পড়াশোনার জন্য প্রথমে সেন্ট অগাস্টিন সেমিনারিতে যান, তারপর ভিলানোভা ইউনিভার্সিটিতে। পরবর্তীতে তিনি কানন আইনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর তিনি পেরুতে মিশনারি হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং সেখানকার ট্রুয়িহো শহরে অগাস্টিনিয়ান সেমিনারির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পেরুর মানুষের প্রতি তার গভীর ভালোবাসার কারণে তিনি পেরুর নাগরিকত্বও গ্রহণ করেন।
দীর্ঘদিন পেরুতে কাজ করার পর ১৯৯৯ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন এবং ২০০১ সাল থেকে অগাস্টিনিয়ান সম্প্রদায়ের বিশ্বনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৪ সালে তিনি পুনরায় পেরুতে ফিরে যান এবং সেখানে তিনি চিকলায়োর বিশপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০২৩ সালে তিনি ভ্যাটিকানে ফিরে আসেন এবং নতুন বিশপদের নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা বিভাগে নেতৃত্ব দেন।
বর্তমানে পোপ লিও চতুর্দশ বিশ্বজুড়ে ১.৪ বিলিয়ন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান। ডলটনের সেই সাধারণ বালক কিভাবে এত বড় দায়িত্ব পেলেন, তা সত্যিই এক অনুপ্রেরণীয় দৃষ্টান্ত।
তার বেড়ে ওঠা, চার্চের প্রতি ভালোবাসা এবং মানুষের প্রতি গভীর সহানুভূতি তাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।