ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি: ট্রাম্পের দাবি, ‘খুব কাছাকাছি’ আমেরিকা
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেছেন যে, ইরানের সঙ্গে একটি পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে ওয়াশিংটন। তাঁর মতে, তেহরান চুক্তির শর্তাবলীতে ‘এক প্রকার রাজি হয়েছে’।
ট্রাম্প বলেন, “ইরান শর্তগুলো মেনে নিতে রাজি হয়েছে। তারা পারমাণবিক বোমা তৈরির উপাদান তৈরি করবে না। আমি বন্ধুত্বপূর্ণভাবে একে ‘নিউক্লিয়ার ডাস্ট’ বলতে চাই। আমরা ইরানে কোনো পারমাণবিক উপাদান তৈরি হতে দেবো না।”
তবে ট্রাম্পের এই মন্তব্যের বিষয়ে ইরানের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। দেশটির আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ’তে (ISNA) খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। জাতিসঙ্ঘে (United Nations) ইরানের মিশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মন্তব্যের জন্য সিএনএন যোগাযোগ করেছে।
কাতারের রাজধানী দোহায় এক ব্যবসায়িক গোলটেবিল বৈঠকে ট্রাম্প আবারও জোর দিয়ে বলেন, ইরানের হাতে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারবে না। তিনি ইঙ্গিত দেন যে, আলোচকেরা হয়তো একটি চুক্তিতে উপনীত হতে চলেছেন।
উপসাগরীয় অঞ্চলে তাঁর সফরকালে ট্রাম্প বারবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে, ইরান কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না। চুক্তি না হলে দেশটির উপর আঘাত হানারও হুমকি দিয়েছেন তিনি। তবে, ইরানের নিজস্ব ভূখণ্ডে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার বিষয়ে তিনি সরাসরি কোনো নিষেধাজ্ঞা দেননি। যদিও ইউরেনিয়াম পারমাণবিক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তবে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ করা হলে এটি অস্ত্র তৈরির কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ইরান সবসময় বলে এসেছে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার তাদের রয়েছে এবং এটি কোনো আলোচনার বিষয় নয়। তবে, ট্রাম্প প্রশাসন এ ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন বার্তা দিয়েছে।
গত সপ্তাহে ‘ব্রেজবার্ট’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ (Steve Witkoff) বলেছিলেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘লাল রেখা’। এর আগে ‘ফক্স নিউজ’-এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ইরানকে স্বল্পমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। গত সপ্তাহে ওমানের রাজধানী মাস্কাটে (Muscat) অনুষ্ঠিত সর্বশেষ আলোচনাকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ‘কঠিন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিএনএন-কে বলেছেন, তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা আলোচনাগুলো উৎসাহব্যঞ্জক ছিল।
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর বিশ্ব বাজারে তেলের দামে পতন দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার সকালে আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৩ শতাংশের বেশি কমে ব্যারেল প্রতি ৬৪ ডলারে নেমে আসে। একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্রের বেঞ্চমার্ক ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (West Texas Intermediate) দাম প্রায় ৩.৫ শতাংশ কমে প্রায় ৬১ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
ট্রাম্প কাতারে দেওয়া ভাষণে দেশটির নিরাপত্তা রক্ষার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, “বিশেষ করে এই দেশটির জন্য, কারণ আপনারা একদম কাছাকাছি—যেন পাথরের মতো, এমনকি এক ফুটের দূরত্বে। আপনারা সরাসরি ইরানের ভেতরে যেতে পারেন। অন্যান্য দেশ অনেক দূরে অবস্থিত, তাই সম্ভবত তাদের ঝুঁকির মাত্রাটা একই রকম নয়। তবে আমরা এই দেশটিকে, এই বিশেষ স্থানটিকে, একটি বিশেষ রাজপরিবারকে রক্ষা করব।”
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান (Masoud Pezeshkian) ট্রাম্পের এই ধরনের হুমকির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “ট্রাম্প মনে করেন, তিনি আমাদের অঞ্চলে এসে হুমকি দিয়ে তাঁর দাবি-দাওয়া মানতে বাধ্য করতে পারবেন। তিনি খুবই বোকা। গত ৪৭ বছর ধরে আপনারা ইরানকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছেন। আমরা হাজার বছর ধরে টিকে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব।”
বুধবার ট্রাম্প আবারও তাঁর হুমকি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, তিনি চান না ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা ‘সহিংস পথে’ যাক।
তথ্য সূত্র: সিএনএন