শিরোনাম: কোকা-কোলা কি সত্যিই মাইগ্রেনের যন্ত্রণা কমাতে পারে? বিশেষজ্ঞদের মতামত
মাথাব্যথা হলে অনেকেরই অস্থির লাগে, যেন জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। আর যদি সেটা হয় মাইগ্রেন, তাহলে তো কথাই নেই। সারা বিশ্বে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষ এই যন্ত্রণাদায়ক সমস্যায় ভোগেন।
মাইগ্রেনের ব্যথায় কাজে যাওয়া বা স্বাভাবিক জীবন চালানোও কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় ডাক্তার দেখানোর পরেও ঘরোয়া কিছু টোটকা ব্যবহার করেন রোগীরা, যার মধ্যে অন্যতম হল ক্যাফিনযুক্ত পানীয়, যেমন কোকা-কোলা।
আসলে, কোকা-কোলা কি সত্যিই মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। শিকাগোর নর্থওয়েস্টার্ন ফেইনবার্গ স্কুল অফ মেডিসিনের নিউরোলজিস্ট ক্যাথরিন ক্যারলের মতে, “এক্ষেত্রে কিছু বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে।”
মাইগ্রেন আসলে সাধারণ মাথাব্যথার চেয়ে আলাদা। এর প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলিতে অতিরিক্ত উত্তেজনা তৈরি হওয়া। মাইগ্রেনের চারটি প্রধান পর্যায় রয়েছে: প্রোড্রোম, অরা, মাথাব্যথা এবং পোস্টড্রোম।
প্রোড্রোম পর্যায়ে, অর্থাৎ মাথাব্যথা শুরু হওয়ার আগে, অনেক সময় কিছু খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। শরীরে তখন এমন কিছু পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যা মাইগ্রেনকে ডেকে আনে।
যুক্তরাজ্যের ডারহাম ইউনিভার্সিটির নিউরোসায়েন্টিস্ট এবং ‘স্প্লিটিং: দ্য ইনসাইড স্টোরি অন হেডেকস’ বইয়ের লেখক আমান্ডা এলিসন বলেন, “মাথাব্যথা শুরুর আগে, আমরা আসলে নিজেদের চিকিৎসা করার চেষ্টা করি।” মাইগ্রেনের কিছু সাধারণ কারণ হলো হরমোনের পরিবর্তন, শরীরে জলের অভাব, অতিরিক্ত বা কম চিনি, মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, আবহাওয়ার পরিবর্তন, অথবা কিছু খাবার, যেমন— ওয়াইন বা প্রসেসড মাংস।
কোকা-কোলা কিভাবে সাহায্য করতে পারে?
কোকা-কোলাতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা মাইগ্রেনের সাধারণ উপসর্গ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
কিন্তু সবার জন্য কি এই টোটকা কাজ করে?
আজিজের মতে, “মাইগ্রেন সবার জন্য একরকম নয়।” একজনের ক্ষেত্রে যে জিনিসটি মাইগ্রেনের কারণ, অন্যজনের ক্ষেত্রে সেটি নাও হতে পারে।
তাই, কোকা-কোলা সবার জন্য উপকারী নাও হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এটি মাইগ্রেনের ব্যথা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। অতিরিক্ত ক্যাফিন গ্রহণ করলে বা যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে কোকা-কোলা এড়িয়ে চলাই ভালো।
এছাড়া, যাদের লো ব্লাড সুগারের সমস্যা নেই, তাদের ক্ষেত্রে কোকা-কোলা কোনো কাজে আসবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাইগ্রেনের চিকিৎসায় কোকা-কোলা ব্যবহারের আগে নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া দরকার। অতিরিক্ত সোডা পান করা এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
মাইগ্রেনের জন্য কোকা-কোলার বদলে ক্যাফিন ট্যাবলেট, কলা বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে।
আমান্ডা এলিসন বলেন, “আমরা যত বেশি জানব, তত ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারব এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রেও এটি কাজে দেবে।”
সুতরাং, মাইগ্রেনের সমস্যা হলে কোকা-কোলা খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক