প্রশান্ত মহাসাগরে বিশাল আকারের বিষাক্ত শৈবালের বিস্তার : পরিবেশ বিপর্যয়ের অশনি সংকেত?
বিশ্বজুড়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের উদ্বেগের মধ্যে, আটলান্টিক মহাসাগরে একটি নতুন সংকট মাথাচাড়া দিয়েছে। বিশাল পরিমাণে বিষাক্ত শৈবালের (seaweed) বিস্তার ঘটছে, যা ফ্লোরিডা এবং ক্যারিবিয়ান সমুদ্র উপকূলের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই বছর প্রায় ৩ কোটি ১০ লক্ষ টন “সারগাসাম” নামক শৈবালের স্তর তৈরি হয়েছে, যা আগের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।
এই সারগাসাম আসলে কী? এটি এক ধরনের বাদামী রঙের শৈবাল, যা সাধারণত আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর অংশে পাওয়া যায়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটছে।
এই শৈবালগুলো একদিকে যেমন সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করছে, তেমনি উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনীতিতেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সারগাসামের এই বিশাল স্তূপ উপকূলের কাছাকাছি এসে জমা হচ্ছে, যা পর্যটন কেন্দ্রগুলোর জন্য চরম উদ্বেগের কারণ। ফ্লোরিডার উপকূল থেকে শুরু করে মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপ পর্যন্ত, সৈকতগুলো এখন এই দুর্গন্ধযুক্ত শৈবালের স্তুপে ভরে যাচ্ছে।
এর ফলে পর্যটকেরা তাদের অবকাশ যাপনের স্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা স্থানীয় অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
এই শৈবালের কারণে পরিবেশের উপরও পড়ছে মারাত্মক প্রভাব। পচে যাওয়া সারগাসাম থেকে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস নির্গত হয়, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
এছাড়া, এটি সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, যার ফলে জলজ প্রাণীর জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়ে।
এই সমস্যার সমাধানে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন উপায় নিয়ে কাজ করছেন। কেউ কেউ বলছেন, এই শৈবালকে জৈব জ্বালানি, নির্মাণ সামগ্রী এবং জল পরিশোধনের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
মেক্সিকোর কুইন্টানা রু রাজ্যের সরকার সমুদ্র থেকে এই শৈবাল অপসারণের জন্য নৌবাহিনীর সাহায্য চেয়েছে এবং উপকূল রক্ষার জন্য ব্যারিয়ার তৈরি করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারগাসামের এই বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ। অতিরিক্ত হারে রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে নদ-নদীতে পুষ্টির পরিমাণ বাড়ছে, যা এই শৈবালের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।
বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
বস্তুত, পরিবেশ বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাকে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, আমাদের জীবনযাত্রার ধরনে পরিবর্তন আনা এবং পরিবেশের প্রতি আরও দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন