রিচার্ড ব্র্যানসন: সাফল্যের চাবিকাঠি, একটি নোটবুক ও গ্রাহক পরিষেবার প্রতি অঙ্গীকার।
বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ ও ব্যবসার জগতে পরিচিত একটি নাম রিচার্ড ব্র্যানসন। তাঁর উদ্যোক্তা সত্তা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং গ্রাহক-বান্ধব মানসিকতার কারণে তিনি সকলের কাছে সুপরিচিত।
সম্প্রতি লন্ডনে ভার্জিন হোটেলের নতুন শাখা উদ্বোধনে এসে ব্র্যানসন তাঁর সাফল্যের গোপন রহস্যের কথা জানিয়েছেন, যা অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা হতে পারে। তাঁর মতে, সাফল্যের মূল মন্ত্র লুকিয়ে আছে একটি সাধারণ বস্তুতে – একটি নোটবুকে।
৭৪ বছর বয়সেও ব্র্যানসনের কর্মস্পৃহা এবং নতুন কিছু করার আগ্রহ সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। তিনি জানান, এখনো তিনি প্রতিদিন নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন এবং নিজের কাজকে উপভোগ করেন।
ব্যবসার বাইরে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজেও তাঁর অবদান রয়েছে। ভার্জিন গ্রুপের বিভিন্ন ব্যবসার প্রসার ঘটাতে তিনি নিয়মিত ভ্রমণ করেন। এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি ব্যবসার উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ পান।
ব্র্যানসন জানান, তিনি সবসময় তাঁর সঙ্গে একটি নোটবুক রাখেন। বিমানে ভ্রমণকালে, হোটেলে থাকার সময় বা অন্য কোনো মিটিংয়ে, তিনি কর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন পরামর্শ ও আইডিয়া লিখে রাখেন। এই আইডিয়াগুলো তাঁর ব্যবসার উন্নতিতে সহায়তা করে।
উদাহরণস্বরূপ, একবার এক বিমানকর্মীর কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন যে, বিমানের ইউনিফর্মের জুতা পায়ে দেওয়ার কারণে অনেকের পায়ে ফোসকা পড়ছে। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি বিষয়টি নোট করেন এবং পরের দিনই ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
শুধু কর্মীদের পরামর্শই নয়, গ্রাহকদের অভিজ্ঞতাকেও তিনি সমান গুরুত্ব দেন। একবার, ভার্জিন আটলান্টিকের ফ্লাইটে লবণ ও মরিচের ছোট কৌটা চুরি হয়ে যাওয়ায় তিনি এর সমাধান করেন ভিন্নভাবে।
কৌটাগুলো বাতিল করার পরিবর্তে সেগুলোর নিচে স্টিকার লাগানো হয়, যেখানে লেখা ছিল, “ভার্জিন আটলান্টিক থেকে চুরি করা হয়েছে”। এই অভিনব আইডিয়াটি একদিকে যেমন কৌটা চুরির প্রবণতা কমিয়েছে, তেমনি এটি একটি আকর্ষণীয় স্মারক হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে।
ব্র্যানসনের মতে, ব্যবসার উন্নতির জন্য গ্রাহক এবং কর্মীদের কথা শোনা খুবই জরুরি। তাঁর মতে, গ্রাহকদের ভালো অভিজ্ঞতা প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসার মান আরও উন্নত করা সম্ভব। গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তিনি সবসময় সচেষ্ট থাকেন।
ভ্রমণকালে ব্র্যানসন শুধুমাত্র তাঁর হোটেলে সময় কাটান না। বরং তিনি স্থানীয় সংস্কৃতি ও প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যান। তাঁর মতে, সক্রিয় জীবনযাত্রা তাঁকে নতুন মানুষ ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করায়, যা তাঁর ব্যবসার জন্য উপকারী।
মরক্কোর আটলাস পর্বতমালায় হাইকিং করা, নেকারের উষ্ণ সমুদ্রের পানিতে সাঁতার কাটা তাঁর প্রিয় শখগুলোর মধ্যে অন্যতম।
রিচার্ড ব্র্যানসনের এই সাফল্যের গল্প আমাদের জন্য একটি বড় উদাহরণ। ব্যবসার উন্নতি এবং গ্রাহক-বান্ধব পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে তাঁর এই চিন্তাভাবনা সত্যিই অনুকরণীয়। তাঁর এই সাফল্যের চাবিকাঠি, একটি নোটবুক ও গ্রাহক পরিষেবার প্রতি অঙ্গীকার, যেকোনো ব্যবসায়ীর জন্য অনুসরণযোগ্য।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার