বিশ্বজুড়ে পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে জাতিসংঘের (United Nations – ইউএন) এক নতুন প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ইউএন এবং ‘ইউগভ’ (YouGov) নামক একটি গবেষণা সংস্থার যৌথ সমীক্ষায় ১৪টি দেশের মানুষের ওপর জরিপ চালানো হয়। এতে দেখা গেছে, অনেক মানুষ আর্থিক অনটন, কাজের অভাব এবং বাসস্থানের সমস্যার কারণে তাদের পছন্দসই সংখ্যক সন্তান নিতে পারছেন না।
এই সমস্যাকে ‘ফার্টিলিটি ক্রাইসিস’ বা প্রজনন ক্ষমতা সংকট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, আর্থিক সীমাবদ্ধতা তাদের সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং থাইল্যান্ডের অর্ধেকের বেশি মানুষ এই সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ২১ শতাংশ মানুষ কাজ হারানোর ভয় বা চাকরির অনিশ্চয়তাকে এই সমস্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
পর্যাপ্ত বাসস্থানের অভাবকেও অনেকে সমস্যা হিসেবে দেখছেন।
এই সংকট শুধু উন্নত বিশ্বেই সীমাবদ্ধ নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এর প্রভাব বাড়ছে। অনেক নারী জানিয়েছেন, তারা চান সন্তান নিতে, তবে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা তাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে।
জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ এবং মহামারীর মতো বিষয়গুলো তাদের মনে ভীতি তৈরি করেছে। মেক্সিকোর ২৯ বছর বয়সী এক নারী জরিপে বলেছেন, “আমি সন্তান চাই, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমার শহরে বাড়ি ভাড়া করা বা বসবাস করা অসম্ভব। যুদ্ধকালীন সময়ে বা পরিবেশের আরও খারাপ পরিস্থিতিতে আমি সন্তান জন্ম দিতে চাই না, যদি সেই সন্তানের কষ্ট হয়।”
অন্যদিকে, এই প্রতিবেদনে অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।
মরক্কোতে ৫১ শতাংশ নারী অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণের শিকার হন।
ইউএন মনে করে, সরকার এবং সমাজের উচিত ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেওয়া। পরিবার পরিকল্পনা পরিষেবা সহজলভ্য করা এবং নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি।
প্রতিবেদনে কর্মক্ষেত্রে বেতনসহ ছুটি, উপযুক্ত প্রজনন স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং সহযোগী সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নাইজেরিয়ার ১০ জনের মধ্যে ১ জনের বেশি নারী-পুরুষ তাদের কাঙ্ক্ষিতের চেয়ে বেশি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, যার কারণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা সেবার অভাব।
এই সংকট মোকাবিলায় ইউএন দারিদ্র্য বিমোচন, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বন্ধ করা এবং একক মায়ের পাশাপাশি এলজিবিটিকিউ+ (LGBTQ+) সম্প্রদায়ের সদস্যদের সহায়তার মতো পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে।
জরিপে অংশ নেওয়া ১৪টি দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, হাঙ্গেরি, জার্মানি, সুইডেন, ব্রাজিল, মেক্সিকো, মরক্কো, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নাইজেরিয়া অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এই দেশগুলো বিশ্বের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি প্রতিনিধিত্ব করে। মোট ১৪,০০০ জনের বেশি মানুষের ওপর এই জরিপ চালানো হয়, যাদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৮৮ বছরের মধ্যে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন