যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য শুল্ক নীতির কারণে ইউরোপের অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, এমনকি সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতি অর্থাৎ শুল্কের হার কমানো গেলেও এর প্রভাব কাটানো কঠিন হবে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর কিছু প্রভাব পড়তে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী কমিশন সোমবার তাদের নিয়মিত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউরোজোনভুক্ত দেশগুলোর চলতি বছর প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ১.৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৯ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া, ২০২৬ সালের প্রবৃদ্ধির হার ১.৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১.৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
জার্মানির দুর্বল অর্থনীতি এই পূর্বাভাস কমার অন্যতম কারণ। দেশটির অর্থনীতি মূলত রফতানির ওপর নির্ভরশীল।
কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জার্মানির জ্বালানি খরচ বেড়েছে, সেইসঙ্গে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের অভাব এবং চীন থেকে আসা গাড়ির যন্ত্রাংশ ও শিল্প সরঞ্জামের প্রতিযোগিতার কারণে জার্মানির অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর জার্মানির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শূন্যের কোঠায় থাকবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতি বিষয়ক কমিশনার ভালডিস ডোমব্রোভস্কিস বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর জন্য প্রস্তাবিত ২০ শতাংশ শুল্ক হার কমানো না হলে তা উদ্বেগের কারণ হবে।
তিনি একে কোভিড-১৯ মহামারীর কঠিন সময়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যদিও ইউরোপের শ্রমবাজার এখনো শক্তিশালী, তবে শুল্কের কারণে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। কমিশন পূর্বাভাস দিয়েছে যে আগামী বছর বেকারত্বের হার কমে রেকর্ড ৫.৭ শতাংশে নামতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি প্রস্তাবিত ২০ শতাংশ শুল্কের হার আলোচনার মাধ্যমে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা যায়, তাহলে কিছুটা স্বস্তি আসতে পারে।
তবে, ইস্পাত ও গাড়ির ওপর বিদ্যমান ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকলে এবং কম্পিউটার চিপ ও ঔষধের মতো কিছু পণ্যের শুল্ক মওকুফ করা হলেও এই অনিশ্চয়তা পুরোপুরি কাটবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের এই শুল্কনীতি ইউরোপের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ালেও, এর কিছু প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। ইউরোপে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ।
ইউরোপের অর্থনৈতিক দুর্বলতা বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। জার্মানির অর্থনৈতিক সংকট থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
রফতানি বাজারকে কিভাবে আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ করা যায় এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস