প্যানামার একটি দ্বীপে বানরের অদ্ভুত আচরণ, কিভাবে একটি প্রজাতি অন্য প্রজাতির শিশুদের অপহরণ করছে?
প্যানামার উপকূলের একটি ছোট দ্বীপ, যার নাম জিকারন। এখানকার সাদা-মুখো ক্যাপুচিন (capuchin) বানরদের আচরণ দেখে বিজ্ঞানীরা রীতিমত বিস্মিত। তারা দেখছেন, এই দ্বীপের পুরুষ ক্যাপুচিন বানরেরা অন্য একটি প্রজাতির শিশু বানর, অর্থাৎ হাউলার (howler) বানরের বাচ্চাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানানো হয়েছে।
অধ্যয়নটি মূলত শুরু হয়েছিল অন্য একটি কারণে। বিজ্ঞানীরা এই দ্বীপে পাথর ব্যবহার করে খাবার তৈরি করতে পারা ক্যাপুচিন বানরদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করছিলেন।
কিন্তু তাদের ক্যামেরায় ধরা পরে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। দেখা যায়, “জোকার” নামে পরিচিত একটি পুরুষ ক্যাপুচিন বানর, যার মুখে একটি ক্ষতচিহ্ন ছিল, সে হাউলার বানরের শিশুদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
শুধু জোকারই নয়, আরও কিছু ক্যাপুচিন বানরকেও একই কাজ করতে দেখা গেছে।
গবেষকরা বলছেন, প্রথমে তাদের মনে হয়েছিল হয়তো হাউলার বানরেরা তাদের বাচ্চাদের ফেলে গেছে, তাই ক্যাপুচিনরা তাদের দেখাশোনা করছে।
কিন্তু পরে তারা জানতে পারেন, আসলে শিশুদের অপহরণ করা হচ্ছে। গবেষণায় জানা গেছে, অপহৃত শিশুদের সাধারণত বন্দী করে রাখা হয়, যার ফলে তারা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং খাদ্যাভাবে তাদের মৃত্যু হয়।
তাহলে, কেন এই অদ্ভুত আচরণ? বিজ্ঞানীরা এর কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। তাদের মতে, দ্বীপের পরিবেশে খাবারের সহজলভ্যতা এবং শিকারীর অভাবের কারণে ক্যাপুচিন বানররা সম্ভবত একঘেয়ে জীবনযাপন করে।
সম্ভবত, তারা নতুন কিছু করার চেষ্টা করছে। অথবা, অন্যদের দেখে তারা উৎসাহিত হচ্ছে। আবার, পুরুষ ক্যাপুচিনদের মধ্যে শিশুদের প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ কাজ করে।
এই গবেষণার প্রধান গবেষকদের একজন, ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অফ অ্যানিমেল বিহেভিয়ার-এর বিজ্ঞানী জোই গোল্ডসবোরা (Zoë Goldsborough)। তিনি বলেন, “বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক, কারণ এর ফলে হাউলার বানরের শিশুদের জীবনহানি ঘটছে।
এই ঘটনার কারণে জিকারন দ্বীপে বসবাসকারী হাউলার বানরেরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কারণ, হাউলার বানর একটি বিপন্ন প্রজাতি।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ক্যাপুচিনদের এই ধরনের আচরণ হাউলার বানরদের টিকে থাকার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করছেন এবং ভবিষ্যতে এর প্রতিকারের জন্য কাজ করার পরিকল্পনা করছেন। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং প্রাণী আচরণ সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক