মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ খুচরা বিক্রেতা, টার্গেট (Target)-এর ব্যবসায়িক পরিস্থিতি বর্তমানে বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি, তাদের বিক্রি কমে গেছে এবং সেই কারণে তারা তাদের আর্থিক পূর্বাভাসও কমিয়েছে।
এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের কিছু নীতির পরিবর্তন এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত।
সংস্থাটি জানিয়েছে, গত কোয়ার্টারে তাদের পুরনো দোকানগুলোতে বিক্রি কমেছে ৩.৮ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ এবং দোকানে ক্রেতাদের আনাগোনা হ্রাসকে দায়ী করা হচ্ছে।
টার্গেট কর্তৃপক্ষ তাদের ‘ডাইভার্সিটি, ইক্যুইটি, অ্যান্ড ইনক্লুশন’ (Diversity, Equity, and Inclusion – DEI) প্রোগ্রামগুলোতে কিছু পরিবর্তন এনেছিল, যার ফলস্বরূপ এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। DEI হলো এমন একটি নীতি, যা বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষের প্রতি সমান সুযোগ এবং অধিকার নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
জানুয়ারীর ২৪ তারিখে, টার্গেট তাদের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা বাতিল করে এবং জাতিগত ন্যায়বিচারের ওপর গঠিত একটি নির্বাহী কমিটিও বিলুপ্ত করে দেয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে বহু মানুষ তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
অনলাইন প্রতিবাদ থেকে শুরু করে, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিভিন্ন ধর্মগুরুরাও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। এমনকি, লেন্ট (Lent) উপলক্ষে ৪০ দিনের একটি ক্রেতা বয়কটও (boycott) চলেছিল।
এই ঘটনার পর টার্গেটের শেয়ারের দামও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। বুধবার ( যেদিন এই খবর প্রকাশ হয়) বাজার খোলার আগে তাদের শেয়ারের দাম ৪ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়।
গত এক বছরে তাদের শেয়ারের দর কমেছে ৩৭ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, DEI সংক্রান্ত ভুল পদক্ষেপ এবং শুল্কের কারণে টার্গেটকে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক (tariffs) আরোপ করা হয়, যা টার্গেটের মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, এর ফলে তাদের পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, যা ব্যবসার মুনাফাকে প্রভাবিত করে।
টার্গেট মূলত এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যারা সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার ব্যাপারে বরাবরই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর তারা কর্মীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল এবং এলজিবিটিকিউ (LGBTQ) বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রমেও সমর্থন জুগিয়েছিল।
কিন্তু DEI সংক্রান্ত নীতি পরিবর্তনের ফলে তারা তাদের অনেক গ্রাহকের আস্থা হারিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, টার্গেটের এই সমস্যাগুলো সহজে মিটবে না। তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা এবং গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন